জুমাতুল বিদার গুরুত্ব ও তাৎপর্য || জুমাতুল বিদার আমল সমূহ || জুমাতুল বিদার ফজিলত।

রমজানের পবিত্রতা রক্ষার আরেকটি উপায় হলো বেশি বেশি দোয়া করা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। এই মাসে, একজন ইমানদার ব্যক্তির রোজা রেখে করা প্রার্থনা অন্যান্য দিনের তুলনায় সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। আর এই মাহে রমজানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো জুমাতুল বিদা।

জুমাতুল বিদার গুরুত্ব ও তাৎপর্য || জুমাতুল বিদার আমল সমূহ || জুমাতুল বিদার ফজিলত।

এই দিন জুম’আ নামাজের পর নবী করিম (সাঃ) বিশেষ সালাত আদায় করতেন এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতেন। তাই তার (হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসালাম) উম্মত হওয়ায় প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির দায়িত্ব হলো রমজান মাসের শেষ জুম’আর দিনটিতে বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা।

এছাড়া জুমাতুল বিদারের আমল হিসেবে আমরা বেশি বেশি দরূদ শরীফ পাঠ করবো এবং রমজান মাসের পবিত্রতা যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য শারীরিক পবিত্রতা বজায় রাখব।

{getToc} $title={Table of Contents} $count={Boolean}

কোন দিন-কে জুমাতুল বিদা বলে?

ইদুল ফিতরের পুর্বে রমজান মাসের শেষ শুক্রবারের দিনটিই হলো সকল মুসলমানদের জন্য জুমাতুল বিদা। এই দিনে জুম’আ -এর পাশাপাশি পাচ ওয়াক্ত সালাত যথাযত জামাতের সাথে আদায় করলে অন্যান্য শুক্রবারের তুলনায় বেশি রহমত ও বরকত অর্জন করা সম্ভব।

আমরা সকলেই জানি যে রমজানের মাস বাদে অন্যান্য শুক্রবার সাধারণত মুমিনদের জন্য সপ্তাহিক ইদের দিন। তবে রমজান মাসে প্রতিটি শুক্রবার অন্যান্য সপ্তাহের তুলনায় ৭০টি জুম’আর নামাজের সমতুল্য।

তাই রমজান মাসের প্রতিটি জুম’আর নামাজ অনেক বরকতময় হওয়ায় আমাদের সকলের উচিত জামাতের সাথে নামাজ আদায় করা।

{getCard} $type={post} $title={Read more}

জুমাতুল বিদা ২০২৪

এই মাহে রমজান মাসের শেষ জুম’আর দিনটি হলো এপ্রিল মাসের ৫ তারিক (April 5, 2024) ।এই দিনটিই পবিত্র রমজান মাসের শেষ শুক্রবার এবং মুমিনদের জন্য জুমাতুল বিদা। রমজান মাসের প্রতি শুক্রবারে জুম’আর সালাত আদায় করার মাধ্যমে সাধারনত ৭০টি সপ্তাহিক জুম’আর সালাতের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। সুতরাং এই দিনে বেশি বেশি নফল নামাজের পাশাপাশি সহিহ আমল হিসেবে দরুদ শরিফ পড়ার পরামর্শ রইলো।

কেনো আমরা জুমাতুল বিদা আদায় করি?

নবী করিম (সাঃ) রমজান মাসের শেষ শুক্রবারে সালাতুল জুম’আর নামাজ আদায় করার পরপরই বিশেষ নামাজ আদায় করতেন। সুতরাং, তার সকল উম্মতরা অর্থাৎ প্রত্যেক মুসলমানরা এই (রমজানের শেষ শুক্রবার) দিনে জুম’আ নামাজ বাদে বিশেষ নামাজ আদায় এবং বিশেষ মোনাজাত করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সকল গুণাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।

জুমাতু্ল বিদা কেনো গুরুত্বপুর্ণ?

রমজান মাসে রোজা অবস্থায় জুমার দিনের দোয়া কবুলের শেষ সুযোগ হিসেবে জুমাতুল বিদা আমাদের সকলের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন – রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন রমজান মাস সীমাহিন ফজিলত আদায়ের মাস এবং এই একটি মাসে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় পাশাপাশি শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। সুতরাং রমজান মাসের প্রতিটি সালাত মুসলমানদের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ণ।

তেমনই এই মাসের শেষ জু’মার নামাজও আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপুর্ণ কেননা এই দিন সালাত আদায়ের মাধ্যমে রমজান মাসকে বিদায় জানানো হয় যার কারণে আমরা এই দিনটিকে জুমাতুল বিদা বলে থাকি।

ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের নিকট জুমাতুল বিদা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি সালাত আদায়ের দিন। যেহেতু আমরা সকলেই হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত, সেই ক্ষেত্রে জুমাতুল বিদা এই দিনে জামাতে জুম’আর সালাত আদায় করা এবং শেষে বিশেষ নামাজ আদায় করা আমদের সকলেরই জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

এই দিন যেমন বেশি বেশি সোয়াব ও সীমাহিন ফজিলত অর্জন করা সম্ভব তেমনই মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট নিজের ইচ্ছে প্রকাশ ও সকল গুণাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করারও বিশেষ সুযোগ রয়েছে।

{getCard} $type={post} $title={Read more}

জুমাতুল বিদার আমল সমূহ

জুমাতুল বিদার সর্বোত্তম আমল হচ্ছে প্রিয় নবীর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করা। দরুদ শরিফ মুসলীমদের জন্য অনেক গুরুত্বপুর্ণ একটি আমল। এ আমলের মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। এরই পাশাপাশি দরুদ শরিফ পাঠ করার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ ও তার প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ করে থাকি।

তাই “দরুদ শরীফ” পাঠ করা জুমাতুল বিদার দিনে শ্রেষ্ঠ আমল।

দরুদ শরীফঃ

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

উচ্চারনঃ আল্লা-হুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

আল্লা-হুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিউ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন, কামা বা-রাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আ-লি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ

দরুদ শরিফ পাঠ নিয়ে পবিত্র কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা: আহযাব, আয়াত: ৫৬ -তে বলেছেনঃ

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

বাংলা অর্থঃ “নিশ্চয়ই আমি (মহান আল্লাহ) নিজে এবং আমার (আল্লাহ তায়ালার) ফেরেস্তারা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর দরুদ পাঠ করার পর সালাম প্রেরণ করিয়া থাকে; হে মুমিনরা! তোমরাও তার (নবী করিম সাঃ) এর ওপর দরুদ পাঠ কর এবং সালাম প্রেরণ কর।”

বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করার পাশাপাশি কিছু সুন্নত ও পালন করা আবশ্যক যার মধ্যে আছে ভালো করে গোসল করে নিজেকে পবিত্র করা, নতুন বা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিহিত করা, আতর বা পবিত্র সুগন্ধি (Alcohol মুক্ত) ব্যবহার করা, হেঁটে সবার আগে মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করা এবং ইমামের যতটা কাছাকাছি জায়গায় সম্ভব ততটা কাছে নামাজের স্থান দখলে নেওয়া।

জুমাতুল বিদার ফজিলত

জুমাতুল বিদা পবিত্র একটি দিন। এই দিনে মাহে রমজানের শেষ জুম’আ সালাত হয়ে থাকে। এই দিনটির বিশেষ হওয়ার আরেকটি কারণ হলো মহান আল্লাহ এই দিনে হযরত আদম (আঃ) সৃষ্টি করেছিলেন, জান্নাতে এবং পৃথিবীতেও তিনি (আদম আঃ) শুক্রবারে প্রবেশ করেন।

আবার বিখ্যাত তাফসির ‘ইবনে কাসীর’ থেকে জানা যায় যে কিয়ামতের দিনটিও হবে শুক্রবার এর দিন। এইসকল কারনে ইসলামে শুক্রবার দিনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন।

তবে প্রতিটি মুমিন ব্যক্তির জন্য এই দিনটির গুরুত্ব রমজান মাসে আরও বেড়ে যায়। কেননা, রমজান মাসের সর্বোত্তম দিবস হলো জুমাতুল বিদা, যা মাহে রমজানে পরিসমাপ্তিসূচক শেষ জুম’আর মাধ্যমে পালিত হয়।

সুনানে আবু দাউদ থেকে পাওয়া যায়, রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিনে (শুক্রবারে) ভালো করে গোসল করে পবিত্র হয়ে, দ্রুত পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং ইমামের যতটা সম্ভব নিকটতম স্থানে অবস্থান করে মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনবে তার প্রতিটি কদমের বিপরিতে অবিরত এক বছর নামাজ ও রোজার সমান সওয়াব যুক্ত করা হবে।

{getCard} $type={post} $title={Read more}

শেষ কথা

মাহে রমজান মাস প্রতিটি ইসলাম অনুসারীদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। রমজান মাসের প্রতি জুমার নামাজ ৭০টি সালাতুল জুম’আ এর সমান। তাই এ দিনে বেশি বেশি সুন্নত ও নফল নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব।

এই দিনে আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশি বেশি করে ক্ষমা প্রার্থনা করবো এবং আমাদের প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর প্রশংসায় বেশি বেশি দরুদ শরিফ পড়বো।

পাশাপাশি যতটা সম্ভব শয়তান (ইবলিশ) এর ফেতনা হতে বিরত থাকবো এবং নিজের রুহের ও শরীরের পবিত্রতা বজায় রাখার চেষ্টা করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *