সাম্প্রতিক সময়ে চাকরীর বাজার ও বাস্তবতা।

কোম্পানি খুজছে দক্ষ কর্মী অন্যদিকে তরুণ সমাজ পাচ্ছে না কাজ । জ্বী, এটাই বর্তমান সময়ের চাকরির বাজার। খুবই উভয় সংকটে ভুগছে বর্তমানে চাকরি বাজার। মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকার কতজন আছে তা পরিষ্কার নয় তবে কোন চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলে সেখানে একটি বিশাল জনবলের প্রার্থীরা আবেদন করে, সেটা থেকেই শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা সহজে ধারণা করা যায়।

সাধারণ কোন চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে এত এত মানুষ আবেদন করে, যে তাদের ইন্টারভিউ নিতেও কোম্পানি হিমশিম খেয়ে যায়। এক্ষেত্রে চাকরিটি সরকারি কিংবা বেসরকারি যেমনই হোক না কেন, চাকরিতে আবেদনের সংখ্যা কমে না। আর যদি সে চাকরিটি হয় সরকারি চাকরি তাহলে সেটা তো সোনার হরিণ। এই সোনার হরিণকে ধরতে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে ও মানুষ পিছপা হয় না।

সাম্প্রতিক সময়ে চাকরীর বাজার ও বাস্তবতা

সাম্প্রতিক সময়ে চাকরির বাজারে ধসের কারণ

সাম্প্রতিক সময়ে চাকরির বাজারে ধস নেমেছে। এর কিছু কারণ রয়েছে প্রথম কারণ হলো কোভিড ১৯। কোভিড নাইনটিনের প্রকোপে প্রচুর মানুষ যেমন তাদের চাকরি হারিয়েছে ঠিক তেমনি প্রচুর কোম্পানি দেউলিয়া হয়েছে। কোভিড নাইন্টিন এর সময়ে হওয়া এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে আবার নতুনভাবে তৈরি হতে মানুষের প্রচুর সময় লেগেছে।

ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্রুত প্রসারের কারণে বর্তমান সময়ের তরুণদের কাজের অভাব দেখা দিয়েছে। তরুণদের বিভিন্ন কাজ ডিজিটাল প্রযুক্তি ছিনিয়ে নিয়েছে। আগে যে কাজ করতে কয়েক ঘন্টা লাগতো এখন মাত্র কয়েক মিনিটে সে কাজ সম্ভব হয়ে যায়। তাই আজ এ কাজগুলো আগে মানুষকে দিয়ে করানো হতো কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তি দিয়ে এগুলো নিমিষেই করানো হচ্ছে। যার ফলে তরুণ সমাজের কাজ কমে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রযুক্তি চাকরির বাজার দখল করে নিচ্ছে।

বাংলাদেশের চাকরি বাজার সাম্প্রতিক সময়ে যে অবস্থায় আছে, তার বৈশিষ্ট্য হিসেবে যে বিষয়গুলো তুলে ধরা যায় সেগুলো নিচে দেওয়া হল।

  • চাকরির বাজার এর প্রকৃতি খুবই দ্রুত পরিবর্তনশীল
  • প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে কর্মস্থলে অবস্থানের গুরুত্ব কম
  • টেলি কমিউনিকেশন, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে চাকরির বাজার খুবই প্রসারণশীল
  • স্থায়ী চাকরির সংখ্যা কমে যাচ্ছে খুব দ্রুত
  • বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি সুযোগ সবচেয়ে বেশি

বর্তমানে চাকরিজীবীরা এক খাত হতে অন্য খাতে খুব সহজেই চাকরি পরিবর্তন করছে। এবং চাকরি দাতারা চাকরি প্রার্থীর দক্ষতা এবং তার দক্ষতার মূল্য অনুযায়ী বেতন নির্ধারণ করছে। বর্তমানে চাকরির ক্ষেত্রে, শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে চাকরির বাজারে চাকরি পেতে কি কি বিষয় প্রাধান্য পাবে ?

সাম্প্রতিক সময় চাকরির বাজারে নির্দিষ্ট কিছু যোগ্যতাকে অধিক বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। আমরা হয়তো অনেকে এটা জানি না বর্তমানে শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকেও দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। একজন বেকার হিসেবে কিংবা একজন চাকরিপ্রার্থী হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে চাকরির বাজার ধরতে হলে আপনার যে যে বিষয়গুলোর উপর বেশি প্রাধান্য দিতে হবে ।

  • আপনাকে তথ্য প্রযুক্তির উপর সবচেয়ে বেশি দক্ষ হতে হবে
  • যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনার দক্ষতা হতে হবে অনেক বেশি
  • ভাষাগত এবং আচরণগত দক্ষতা অনেক জরুরী
  • থাকতে হবে কাস্টমারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার দক্ষতা

সাম্প্রতিক সময়ের চাকরির বাজার এবং এর বাস্তবতা খুবই ভয়াবহ। এ অতিরিক্ত প্রতিযোগী চাকরির বাজারে আপনাকে এগিয়ে থাকতে হলে যে বিষয়গুলোকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে ।

  • আপনাকে হতে হবে উচ্চমানের শিক্ষিত
  • থাকতে হবে আপনার বিভিন্ন সেক্টরে প্রশিক্ষণ
  • বিভিন্ন বিষয়ে আপনার থাকতে হবে দক্ষতা
  • কাজের ক্ষেত্রে আপনার থাকতে হবে অভিজ্ঞতা
  • পরিশেষে আপনার থাকতে হবে একটি বড় নেটওয়ার্ক

চাকরির বাজারের বাস্তবতা

পত্রপত্রিকা কিংবা ওয়েবসাইট ঘাটলেই সহজেই বুঝা যায় একটা কোম্পানি প্রতিমাসে ঠিক কতটা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। খুবই সাধারণ একটি কোম্পানিকেও প্রতি মাসে তিন থেকে চারবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। তাহলে বুঝোন এবার কি পরিমান দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে তাদের। এই অভাব পূরণ করতে তাদেরকে প্রতি মাসে তিন থেকে চার বার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে হচ্ছে। আর অন্যদিকে দেখলে বুঝতে পারবেন তরুণ সমাজ এই বিজ্ঞাপন গুলোতে আবেদন করছে। আবেদনের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়।

চাকরির এমন মন্দা অবস্থা তারপরও কোম্পানিগুলো কেন প্রতিমাসে তিন থেকে চারবার করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচ্ছে। দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি এত এত শিক্ষিত মানুষ, বেকার মানুষ চাকরির জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছে কিন্তু এদের খুব কম সংখ্যক এর মধ্যেই দক্ষতা আছে। দক্ষতা না থাকার কারণে চাকরির বাজার থেকে তারা পিছিয়ে পড়ছে এবং যার ফলাফল বেকারত্ব।

সাম্প্রতিক চাকরির বাজার মন্দা হবার কারণ

বিভিন্ন কারণে সাম্প্রতিক চাকরির বাজারে এমন মন্দা দেখা দিয়েছে। কোভিড, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং ডলার সংকটের কারণে নতুন কোন খাতে বিনিয়োগ করতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। যার ফলে কর্মসংস্থানে টান পড়েছে। চাকরির খাত কমে গেছে, ফলে বৃত্তি পেয়েছে বেকারের হার। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটি খাত হলো পোশাক খাত। বর্তমান সময়ে পোষাকখাতে বিনিয়োগে না থাকার কারনে বেড়েছে সাম্প্রতিক চাকরির বাজারে মন্দা। এখন আরো কিছু কারণ আমরা উল্লেখ করব যেগুলো সাম্প্রতিক চাকরির বাজার মন্দা হবার জন্য দায়ী

  • পোষাক খাতে উল্লেখযোগ্য কোন বিনিয়োগ করা হয়নি গত পাঁচ বছর ধরে
  • ২০ শতাংশ হারে কমেছে চাকরির বিজ্ঞাপন 
  • কোভিডের পরে পোশাক খাতে নেওয়া হয়নি কোনো নতুন কর্মী 
  • বাস ট্রাক নিবন্ধন কমেছে, বন্ধ হয়েছে বহু রেস্তোরা হোটেল
  • বিভিন্ন কোম্পানি ফার্ম এর নিবন্ধনের হার ও কমেছে  

কর্মসংস্থান এবং আয়-ব্যয়ের জরিপ হয়নি গত পাঁচ বছর ধরে। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর করা জরিপ দিয়েই কর্মসংস্থানের প্রকৃত পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। দেশের কর্মসংস্থান, বেকার পরিস্থিতি, জনশক্তি এবং শ্রমশক্তি ইত্যাদি বিষয়ে একটি সঠিক ধারণা পাওয়া যাবে এ জরিপ থেকে।

বলা হয়ে থাকে চাকরির জন্য বয়স নয় দক্ষতাকেই জোর দিন। বাংলাদেশের বেকারত্ব সমস্যা আগে থেকে অনেকটা প্রকট ছিল কিন্তু মহামারীর পর থেকে এই সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। যার ফলে এলোমেলো হয়ে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা।

সাম্প্রতিক চাকরির বাজারে চাকরির কর্মপরিকল্পনা

সাম্প্রতিক সময়ের এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আপনাকে আপনার কর্মপরিকল্পনা খুব সুন্দর ভাবে তৈরি করে নিতে হবে। নতুবা ক্যারিয়ার গঠন করা কঠিন হয়ে যাবে। সাম্প্রতিক চাকরির বাজারে আপনি চাকরি পেতে কিছু কর্ম পরিকল্পনা অনুসরণ করতে পারেন

  • যেমন নিজেকে মূল্যায়ন করা 
  • আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্যগুলো নিয়ে গবেষণা করা 
  • নিজে নিজে বিভিন্ন কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করা 
  • সেলফ মার্কেটিং এর বিভিন্ন কৌশল তৈরি করা 
  • চাকুরীর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা 
  • যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে নিজের এ সকল পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করা 

আপনি বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতে যদি একটি সুন্দর ক্যারিয়ার গড়তে চান তাহলে আপনাকে শুধু শিক্ষিত হলেই হবে না পড়াশুনার পাশাপাশি আপনাকে দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে ভালো যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। একটি কোম্পানি যখন আপনাকে তাদের কোম্পানিতে নিযুক্ত করবে, নিশ্চয়ই আপনাকে আপনার এমন কোন দক্ষতা দেখাতে হবে যাতে কোম্পানিটি এগিয়ে যেতে পারে। আপনি যদি সেরকম কোন দক্ষতা দেখাতে না পারেন তাহলে কোম্পানিটি আপনাকে কেন চাকরি দিবে।

এজন্য এসব দক্ষতা অর্জন করে আপনাকে একটি ভালো চাকরি পেতে হবে। যার জন্য নিজেকে উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, একটি সুন্দর ক্যারিয়ার তৈরি করতে হবে। সাম্প্রতিক চাকরির বাজারে সাফল্য অর্জনের জন্য আপনাকে যে গুনাবলী এবং দক্ষতাগুলো অর্জন করে রাখতে হবে সেগুলো হলো

  • আপনাকে পেশাদারিত্ব হতে হবে
  • আপনার অনেক প্রশংসা করার ক্ষমতা থাকতে হবে
  • ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আপনাকে নতুন কিছু আনতে হবে
  • আপনার কাজের দক্ষতা আরো বাড়ানোর আগ্রহ থাকতে হবে
  • আপনি কোন কাজে দক্ষ সে বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান থাকতে হবে

পুরো আর্টিকেলটি পড়ে এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনারা বুঝে গেছেন সাম্প্রতিক চাকরির বাজার খুবই মন্দা।প্রকৃতপক্ষে এটাকে মন্দা বললে ও ভুল হবে। যাইহোক এ পরিস্থিতিতে নিজেকে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে, নিজের ক্যারিয়ারকে গড়ে তুলতে, আপনাকে শুধু উচ্চশিক্ষার দিকে মনোযোগ না দিয়ে দক্ষতার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।

নিজের ক্যারিয়ারের দিকে ফোকাস রাখবেন। লাইফে ভালো কিছু করতে হলে, ভালো একটা চাকরি করতে হলে এবং ভালো ক্যারিয়ার গড়তে হলে অবশ্যই বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করবেন। দক্ষতা অর্জনের জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি আপনি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিবেন। তাহলেই বাংলাদেশ থেকে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব হবে

বর্তমানে দক্ষতা অর্জনের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সরকারিভাবে দেওয়া হয়। তাই দক্ষতা অর্জন এখন আর কোন কঠিন বিষয় নয় । পড়াশোনার পাশাপাশি আপনি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। সরকারিভাবে হওয়া এসব প্রশিক্ষণে আপনি অংশ নিতে পারেন বিনামূল্যে। এমনকি এসব প্রশিক্ষণে নিলে আপনি পাবেন সরকারিভাবে অনুদান। যে অনুদানটিকে কাজে লাগিয়ে আপনি কোন বিজনেস কিংবা কোন খাতে মূলধন হিসেবে কাজে লাগিয়ে শুরু করতে পারেন আপনার ক্যারিয়ার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *