৯ম-১০ম শ্রেণি বাংলা সাহিত্য । অভাগীর স্বর্গ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৯ম-১০ম শ্রেণি বাংলা সাহিত্য । অভাগীর স্বর্গ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

৯ম-১০ম শ্রেণি বাংলা সাহিত্য । অভাগীর স্বর্গ সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

{getToc} $title={Table of Contents} $count={Boolean}

অভাগীর স্বর্গ প্রশ্ন উত্তর

অভাগীর স্বর্গ প্রশ্ন ১

চেয়ারম্যান সাহেবের বাবার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিরাট আয়োজন। এলাকার ধনী গরিব সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। দরিদ্র কৃষক 'এরা খয়ের আলী, ছেলে রনি ও মেয়ে রেণুকে নিয়ে সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বসার স্থানে ভুল করে খেতে বসেছেন। চেয়ারম্যানের স্ত্রী চিৎকার করে বললেন, 'এসব অসভ্য ছোট লোকদের দাওয়াত দেওয়াই ভুল হয়েছে।' চেয়ারম্যানে সাহেব স্ত্রীকে বুঝিয়ে বললেন, সকলেই আমার মেহমান।' তিনি রনি ও রেণুকে আদর করলেন এবং স্ত্রীর আচরণের জন্য খয়ের আলীর নিকট দুঃখ প্রকাশ করলেন।

ক. অভাগীকে নদীর চড়ায় মাটি দিতে বলেছিল কে?
খ. মাকে বিশ্বাস করাই কাঙালীর অভ্যাস কেন?
গ. উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের স্ত্রীর। আচরণে 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "সমাজের ধনী ব্যক্তিরা যদি উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের মতো হতো তাহলে অভাগীকে বৈষম্যের শিকার হতে হতো না।"- উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

অভাগীর স্বর্গ ১নং প্রশ্নের উত্তর

(ক).অভাগীকে নদীর চড়ায় মাটি দিতে বলেছিল ভট্টাচার্য মহাশয়।

(খ).মাকে বিশ্বাস করাই কাঙালীর অভ্যাস, কারণ মা ছাড়া সে অন্য কারও সাহচর্য লাভ করেনি।

'অভাগীর স্বর্গ' গল্পে জাতপ্রথার ঘৃণ্য দিক এবং মায়ের প্রতি সন্তানের গভীর বিশ্বাসের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। রোদে দাঁড়িয়ে অভাগী ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রীর সৎকার দেখছিল বলে তার একমাত্র ছেলে কাঙালী তার ওপর অভিমান করে। অভাগী তখন ছেলেকে বলে সে সতী-লক্ষ্মী মা-ঠাকরুনকে রথে করে যেতে দেখেছে। কাঙালী ছোটবেলা থেকে শুধু মায়ের সাহচর্যে বড় হয়েছে। মায়ের কথাই তার কাছে সত্য। তাই সে স্বাভাবিক নিয়মে মায়ের কথাই বিশ্বাস করে। কারণ মাকে বিশ্বাস করা তার অভ্যাস।

সারকথা: (মা ছাড়া কাঙালীর পৃথিবীতে আর কেউ নেই। ছোটবেলা থেকে সে শুধু মায়েরই সাহচর্য লাভ করেছে। তাই মাকে বিশ্বাস করাই তার অভ্যাস।)

(গ). উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের স্ত্রীর আচরণে 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের শ্রেণিবৈষম্যের দিকটি ফুটে উঠেছে।

পৃথিবীতে নানা ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণির মানুষ রয়েছে। কিছু মানুষ তাদের মধ্যে ভেদাভেদের দেয়াল তুলে রাখে। ফলে মানবতা বিপন্ন হয়। মানুষ শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়।

উদ্দীপকে চেয়ারম্যান সাহেবের বাবার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এলাকার সবাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়। নিমন্ত্রণে দরিদ্র কৃষক খয়ের আলী ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভুল করে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বসার স্থানে খেতে বসে। এতে চেয়ারম্যানের স্ত্রী রেগে যান। খয়ের আলীকে অসভ্য, ছোটলোক বলে অপমান করেন। তার এই আচরণ 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের শ্রেণিবৈষম্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। আলোচা গল্পে নিম্নবর্ণের হওয়ায় কাঙালী মায়ের সৎকারের জন্য কাঠ চাইতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছে। নিচু জাতের বলে জমিদারের নির্দেশে তার কর্মচারীরা তাকে গলাধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এইভাবে উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের স্ত্রীর আচরণে 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের শ্রেণিবৈষম্যের দিকটি ফুটে উঠেছে।

সারকথা: (উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের স্ত্রীর আচরণে নিচু শ্রেণির মানুষের প্রতি বৈষম্যপূর্ণ মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে, যা 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পে • প্রতিফলিত শ্রেণিবৈষম্যের দিকটিকে নির্দেশ করে।)

(ঘ)."সমাজের ধনী ব্যক্তিরা যদি উদ্দীপকের চেয়ারম্যানের মতো হতো তাহলে অভাগীকে বৈষম্যের শিকার হতে হতো না।"- উক্তিটি যথার্থ। তৎকালীন হিন্দু সমাজে জাত-পাতের ঘৃণ্য রূপ প্রবলভাবে বিস্তার লাভ করে। শ্রেণিবৈষম্য মানুষকে মানবিকতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আর মানবিকবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিরা মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দেয়, সম্মান করেন, ভালোবাসেন।

উদ্দীপকের চেয়ারম্যান একজন মহৎ ও উদার প্রকৃতির মানুষ। তিনি মিথ্যা আভিজাত্যের গৌরবে মোহাবিষ্ট না থেকে সাধারণ দরিদ্র চাষিকে আদর-যত্ন করেছেন। তিনি স্ত্রীকে বোঝান যে সবাই তার মেহমান। তিনি স্ত্রীর আচরণের জন্য খয়ের আলীর কাছে দুঃখও প্রকাশ করেন। এখানে তার চেতনায় ভ্রাতৃত্ব, সাম্য ও মানবিকতার নিদর্শন ফুটে উঠেছে। অন্যদিকে 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পে সামন্তপ্রভু ঠাকুরদাস মুখুয্যে ও অধর রায়ের নিষ্ঠুরতায় কাঙালী তার মায়ের সৎকার পর্যন্ত করতে পারেনি। কাঙালীকে তারা নিচু জাতের বলে ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছে। কিন্তু ঠাকুরদাস ও অধর রায় যদি চেয়ারম্যান সাহেবের চেতনাকে ধারণ করত তবে অভাগীকে বৈষম্যের শিকার হতে হতো না।

'অভাগীর স্বর্গ' গল্পে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ধনীরা বৈষম্যপূর্ণ মানসিকতার কারণে কাঙালীকে মায়ের সৎকারে সাহায্য করেনি। তারা যদি উদ্দীপকের চেয়ারম্যান সাহেবের মতো মানবিক হতো তাহলে অভাগীকে শ্রেণিবৈষম্যের শিকার হতে হতো না। তার শেষ ইচ্ছা পূরণ হতো। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।

সারকথা:( উদ্দীপকের চেয়ারম্যান একজন উদার মানবিক মানুষ। 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের ধনী বা জমিদার শ্রেণির লোকেরা তার মতো মানসিকতার হলে অভাগীকে শ্রেণিবৈষম্যের শিকার হতে হতো না।)

অভাগীর স্বর্গ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ২০২৪

অভাগীর স্বর্গ প্রশ্ন ২

খাগ ধরার মন্ত্র শিখে মৃত্যুঞ্জয় মস্তবড় সাপুড়ে হয়ে উঠল। একদিন সাপ ধরতে গেলে, বিষষর সাপের দংশনে সে আহত হয়। তার শ্বশুরের দেওয়া সব তাবিজ-কবজ হাত হাতে বেঁধে দেওয়া হলো আর সেই সাথে বড়ু সংখ্যক একা মিলে বস্তু দেব-দেবীর দোহাই এবং ঝাড়ফুঁক করেও তাকে বাঁচাতে পারল না।

ক. গ্রামে কে নাড়ি দেখতে জানত?
খ. মা মরেচে ত যা নীচে দেবে দাঁড়া- অধর রায়ের এরূপ উদ্ভির কারণ কী?
গ.উদ্দীপকে 'অভাগীর স্বর্ণ' গল্পের যে বিশেষ দিকের প্রতিফলন ঘটেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের একটি বিশেষ দিকের প্রতিফলন ঘটলেও গল্পের মূল বিষয়টি অনুপস্থিত। মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।

অভাগীর স্বর্গ ২নং প্রশ্নের উত্তর

(ক).গ্রামে ঈশ্বর নাপিত নাড়ি দেখতে জানত।

(খ)."স্মা মরেচে ত যা নীচে নেবে দাঁড়া"- অধর রায়ের এমন উক্তির কারণ অশৌচের ভয়।

কাঙালী মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য মায়ের মৃত্যুর পর কাঠের ব্যবস্থা করতে জমিদারের কাছারি বাড়ি যায়। কাছারি বাড়ির কর্তা গোমস্তা অধর রায় সেই সময় সন্ধ্যাহিক শেষ করে বাইরে আসেন। কাঙালী তাকে দেখে কান্নাকাটি করে এবং মায়ের মৃত্যুর কথা বলে। অধর রায়ের মনে হয় কাঙালী মড়া ছুঁয়ে এসেছে, সে এখানকার কিছু ছুঁয়ে ফেলতে পারে। এই কথা ভেবে অশৌচের ভয়ে অধর রায় কাঙালীকে উদ্দেশ করে প্রশ্নোত্ত উক্তিটি করেন।

সারকথা: (কাঙালীর মুখে তার মায়ের মৃত্যুর কথা শুনে অধর রায় কাঙালীকে বারান্দা থেকে নিচে নেমে দাঁড়াতে বলেন অশৌচের ভয়ে।)

(গ).উদ্দীপকে 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের অবৈজ্ঞানিক বা টোটকা চিকিৎসা দেওয়ার দিকটির প্রতিফলন ঘটেছে।

সঠিক চিকিৎসা মানুষের জীবন বাঁচায়। রোগ নির্ণয় করতে না পারলে এবং সঠিক চিকিৎসা না করালে মানুষ অকালমৃত্যুর শিকার হয়। এদেশের গ্রামানালে এখনও টোটকা চিকিৎসা দেওয়া হয়, যা সাময়িকভাবে মানুষকে সুস্থ করলেও রোগ নির্মূলে ব্যর্থ হয়।

উদ্দীপকে দেখা যায় সাপুড়ে মৃত্যুঞ্জয় সাপ ধরতে গিয়ে সাপের দংশনে আহত হয়। তার শ্বশুর ও অন্যান্য ওঝা মিলে ঝাড়ফুঁক করে মৃত্যুঞ্জয়কে বাঁচানোর চেষ্টা করে যা চিকিৎসাশাস্ত্র সমর্থন করে না, ফলে তার মৃত্যু হয়। উদ্দীপকের মতো 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পেও টোটকা চিকিৎসার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। কাঙালীর মা অভাগী অসুস্থ হলে প্রতিবেশীরা তাকে দেখতে আসে এবং বিভিন্ন ধরনের টোটকা চিকিৎসার উপায় বলে। কেউ হরিণের শিং ঘষা জল, কেউ গেঁটে-কড়ি পুড়িয়ে মধুতে মাড়িয়ে খেতে বলে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অভাগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। কোনো ওষুধ তার রোগ সারাতে পারে না। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকে আলোচ্য গল্পের যে বিশেষ দিকের প্রতিফলন ঘটেছে তা হলো প্রতিবেশীদের টোটকা চিকিৎসার।

সারকথা: (উদ্দীপক ও অভাগীর স্বর্গ' গল্প উভয় জায়গায় টোটকা চিকিৎসার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকের তাবিজ-কবজ বেঁধে দেওয়া এবং আলোচ্য গল্পের প্রতিবেশীদের নানা ধরনের চিকিৎসা টোটকা চিকিৎসার দিকটিকে ইঙ্গিত করে।)

(ঘ). উদ্দীপকে 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের একটি বিশেষ দিকের প্রতিফলন ঘটলেও গল্পের মূল বিষয়টি অনুপস্থিত। মন্তব্যটি যথার্থ।

এই পৃথিবীতে সব মানুষ সমান। কিন্তু কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে বিভেদের দেয়াল তুলে রাখে। এই বৈষম্যের নির্মমতা মানব সমাজে এমনভাবে জেঁকে বসেছে যে মানুষ প্রতিনিয়ত নিষ্পেষিত হচ্ছে।

উদ্দীপকে এক সাপুড়ের সাপের দংশনে আহত হওয়ার কথা প্রকাশ পেয়েছে। সেই সঙ্গে প্রকাশ পেয়েছে অবৈজ্ঞানিকভাবে ঝাড়ফুঁক ও দেব-দেবীর দোহাই দিয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করার কথা। কিন্তু ওঝারা শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচাতে ব্যর্থ হয়। উদ্দীপকের এই অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসাপদ্ধতির দিকটি 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের কবিরাজি চিকিৎসা ও টোটকা চিকিৎসার বিষয়টিকে মনে করিয়ে দেয়। যেখানে কাঙালী তার মায়ের চিকিৎসার জন্য কবিরাজের কাছ থেকে বড়ি নিয়ে আসে এবং প্রতিবেশীরা তাদের জানা টোটকা চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি বর্ণনা করে। কিন্তু এই বিষয়টি আলোচ্য গল্পের মূল বিষয় নয়। আলোচ্য গল্পের মূল বিষয় হলো সামন্তবাদের নির্মম রূপ এবং নিচু শ্রেণির হতদরিদ্র মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও যন্ত্রণা, যা উদ্দীপকে প্রকাশ পায়নি।

’অভাগীর স্বর্গ' গল্পে একদিকে প্রকাশ পেয়েছে অধর রায়ের মতো ধনী জমিদার গোমস্তাদের নির্মমতা-নির্দয়তা, অন্যদিকে প্রকাশ পেয়েছে কাঙালী-অভাগীদের মতো নিচু শ্রেণির সুবিধাবঞ্চিত মানুষের দুর্ভোগ। এছাড়াও প্রকাশ পেয়েছে বর্ণবৈষম্য, যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। উদ্দীপকে কেবল আলোচ্য গল্পে প্রকাশিত চিকিৎসাব্যবস্থার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

অভাগীর স্বর্গ প্রশ্ন ৩

রহিম চৌধুরী কয়েকটি পির প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েও সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যন্ত। কিছুদিন পূর্বে তাঁর বড় মেয়ের বিয়েতে এলাকার সকলকে দাওয়াত দেন। তিনি ধনী-গরিবের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেননি। তাঁর এ আচরণে এলাকার দরিদ্র জনগণ খুবই সন্তুষ্ট।

ক. ঠাকুরদাস মুদ্ধয্যের স্ত্রী কয়দিনের অসুখে মারা গেলেন?
খ. রসিক দুলে তার পায়ের ধুলো দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলল কেন?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা কর।
ঘ. "অভাগীর আশা পূর্ণতা পাওয়ার জন্য রহিম চৌধুরীদের মতো মানুষ প্রয়োজন"- বক্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।

অভাগীর স্বর্গ ৩নং প্রশ্নের উত্তর

(ক). ঠাকুরদাস মুক্তয্যের স্ত্রী সাত দিনের অসুখে মারা গেলেন।

(খ). স্ত্রীর প্রতি কর্তব্য পালন না করা এবং স্ত্রীর কাছে তার নিজের গুরুত্ব উপলব্ধি করে রসিক দুলে তার পায়ের ধুলো দিতে গিয়ে

কেঁদে ফেলল। রসিক দুলে অভাগীর স্বামী। কিন্তু স্ত্রীর প্রতি কোনো কর্তব্যই সে পালন করেনি। তাদের একমাত্র ছেলে কাঙালী। রসিক আরও একট বিয়ে করে অন্য গ্রামে চলে যায়। এদিকে অভাগী অভাব-অনটনের মধ্যে ছেলেকে বুকে নিয়ে দি দিন কাটায়। প্রায় বিনা চিকিৎসায় আজ সে মৃত্যুপথযাত্রী। অভাগী মৃত্যুর আগে স্বামীর পায়ের ধুলো নিতে চাইলে কাঙালী গিয়ে তাকে ডেকে আনে। তখন রসিক মুসে অভাগীকে পায়ের ধুলো দিতে গিয়ে নিজের কৃতকর্ম এবং তার প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসা ও প্রস্থ্যবোধ দেখে কেঁদে ফেলল।

সারকথা:(স্ত্রীর প্রতি কর্তব্য পালনে অবহেলা সত্ত্বেও ভার কাছে নিজের অবস্থান উপলব্দি করতে পেরে রসিক মুলে তাকে পায়ের ধুলো দিয়ে গিয়ে কেঁদে ফেলল।)

(গ).মানবিক ও শ্রেণিবৈষমাহীন চেতনার দিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

মানুষ মানুষেরই জন্য, জীবন জীবনেরই জন্য। কিন্তু মানবিকতার এই মূলমন্ত্র বর্তমান সমাজ সভ্যতায় খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না। অনেকে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে রাখে, আবার অনেকে কোনো ভেদাভেদ স্বীকার করেন না।

উদ্দীপকে মানবিকতার উজ্জ্বল নিদর্শন দেখা যায় রহিম চৌধুরীর মাঝে। তিনি অনেক ধন-সম্পদের মালিক হয়েও সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যন্ত। নিজের মেয়ের বিয়েতে তিনি এলাকার আপামর জনসাধারণকে নিমন্ত্রণ করেন। সেখানে জাতভেদ বা শ্রেণিভেদ কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। এই চেতনাটি 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের উপস্থাপিত জাত-পাতের ভেদাভেদের সল্যে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। আলোড়া গল্পে বর্ণিত হয়েছে তৎকালীন হিন্দু সমাজে বর্ণ-বৈষম্য, তথাকথিত নীচ বর্ণের মানুষদের উপর জুলুম, নির্যাতন, অত্যাচার ইত্যাদি। এই জাতপ্রথার বলি হয়েই কাঙালীর মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ হয়নি। নীচ জাতের ছেলে বলে কাঙালীকে অবহেলা, অপমান সহ্য করতে হয়েছে। মায়ের মুখাগ্নি করার জন্য নিজের বাড়ির আঙ্গিনার গাছ কাটারও অনুমতি পায়নি ব্রাহ্মণ জমিদারের কাছ থেকে। সমাজের এই বর্ণভেদ, শ্রেণিভেদ চেতনার সঙ্গে উদ্দীপকটি বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।

সারকথা: (উদ্দীপকে মানবতার কথা, সাম্যের কথা বলা হয়েছে। 'অভাগীর স্বর্গ' গরে জাত-পাতের দোহাই দিয়ে দরিদ্রের প্রতি শোষণের উঠেছে। এখানেই উদ্দীপকের সলো আলোচ্য গল্পের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।)

(ঘ)."অভাগীর আশা পূর্ণতা পাওয়ার জন্য রহিম চৌধুরীদের মতো মানুষ প্রয়োজন" মন্তব্যটি যথার্থ।

অনেকে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে। জাত-পাতের দোহাই দিয়ে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সমাজের ধনিকশ্রেণি দাবিয়ে রাখে, যা মানবিকতার পরিপন্থী। তবে অনেকে এই জাত-পাতের অসারতা উপলব্ধি করে মানবিকতার জয়গানে নির্যাতিত মানুষকে মুক্তির পথ দেখান।

উদ্দীপকের রহিম চৌধুরী মানবতাবাদী মানুষ। তিনি অঢেল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েও সাধারণ জীবনযাপন করতে পছন্দ করেন। নিজের মেয়ের বিয়েতে আপামর গ্রামবাসীকে নিমন্ত্রণ করে সাম্যবাদী চেতনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। কিন্তু 'অভদ্রতীর স্বর্গ' গল্পে অসাম্য সমাজব্যবস্থা প্রতিভাত হয়েছে। জাতভেদ ও ধনী-দরিদ্রতেদ সেই সমাজকে কলুষিত করেছে।

'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের অভাগী সমাজে তথাকথিত নীচ জাতের স্বামী-পরিত্যক্তা এক নারী। একমাত্র সন্তান কাঙালীকে নিয়ে সে কোনোক্রমে জীবন চালায়। কিন্তু দারিদ্র্যের কশাঘাতে সে বিনা চিকিৎসায়ই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তার ইচ্ছা ছিল ছেলে কাঙালীর হাতের মুখাগ্নি নিয়ে স্বর্গবাসী হওয়া। কিন্তু শোষক জমিদার জাত-পাতের বিভেদ-বৈষম্য করে কাঙালীকে তার মায়ের শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে দেয় না। এক্ষেত্রে উদ্দীপকের রহিম চৌধুরীর মতো মানবতাবাদী মানুষ থাকলে অভাগীর আশা পূর্ণতা পেত। তাই বলা যায়, মন্তব্যটি যথার্থ।

Read more: অধ্যবসায় রচনা

অভাগীর স্বর্গ সৃজনশীল প্রশ্ন সাজেশন

অভাগীর স্বর্গ প্রশ্ন ৪

গফুর লজ্জিত হইয়া বলিল, বাপ বেটিতে দুবেলা দুটো পেটভরে খেতে পর্যন্ত পাইনে। ঘরের পানে চেয়ে দেখ, বিষ্টি বাদলে মেয়েটিকে নিয়ে কেরালা পরাটাকে মুদ্দিন পেট পুরো মতে মেলে না। মহেশকে একটিবার তাকিয়ে দেখানে চেয়ে দেখ, বিষ্টি বাদলে মেয়েটিকে নিয়ে কেন খেতে দিই। বলিতে বলিতেই গফুর ধপ করিয়া রাজলেরা গোনা আছে। মাও না ঠাকুর মশাই কহিলেন, 'আমর, ছুঁয়ে ফেলবি নাকি?'

ক. গ্রামে নাড়ি দেখতে জানত কে?
খ. রসিক হতবুদ্ধির মত দাঁড়াইয়া রহিল- কেন?
গ. উদ্দীপকের গফুর চরিত্রটি কোন দিক দিয়ে 'অভাগীর স্বর্ণ' গল্পের কাঙালী চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের তর্করত্ন কি 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের অধর রায়ের সার্থক প্রতিনিধি? তোমাদায়েনাত্তর সপক্ষে যুক্তি দাও

অভাগীর স্বর্গ ৪ নং প্রশ্নের উত্তর

(ক).গ্রামে ঈশ্বর নাপিত নাড়ি দেখতে জানত।

(খ).অভাগী মৃত্যুর আগে তার পায়ের ধুলো চেয়েছে একথা জানতে পেরে রসিক হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে রইল।

অভাগীর স্বামী রসিক আরেকজনকে বিয়ে করে অন্য গ্রামে বসতি গড়ে। তখন থেকে স্বামীর সঙ্গে অভাগীর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু মৃত্যুপথযাত্রী অভাগী স্বামীর আশীর্বাদস্বরূপ তার পায়ের ধুলো নিতে চেয়েছে। এই বিষয়টি জানার পর রসিক দুলে হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। কারণ সে ভাবেনি এই পৃথিবীতে তার মতো এমন লোকের পায়ের ধুলোরও কারও প্রয়োজন আছে।।

সারকথা: (অভাগীর অন্তিম ইচ্ছা শোনার পর রদিক হতবুদ্ধি। হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।)

(গ).বঞ্চিত ও অবহেলিত হওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের গফুর চরিত্রটি 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের কাঙালী চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।।

দরিদ্রের দুঃখ-কষ্ট, ক্রন্দন ধনীর কানে গিয়ে পৌছায় না। ধনীরা দরিদ্রদের অবহেলা করে দূরে সরিয়ে রাখে, তাদের বঞ্চিত করে। এতে দরিদ্রের যন্ত্রণা আরও বাড়ে এবং এই কঞ্চনা নিয়েই তাদের বেঁচে থাকতে হয়।

'অভাগীর স্বর্গ' গল্পে কাঙালী সমাজে প্রচলিত নীচ জাতের বলে তাকে নিগৃহীত হতে হয়েছে। মায়ের সৎকারের জন্য বেলগাছটি চাইতে গিয়ে জমিদারের লোকজন দ্বারা নিগৃহীত ও অত্যাচারিত হয়েছে। নীচ জাতের বলে তার স্পর্শ থেকে বাঁচতে তাকে দূর দূর করেছে তারা। উদ্দীপকের গফুরও দরিদ্র বলে অবহেলিত, বঞ্চিত হয়েছে। মুসলমান বলে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের তর্করত্ন তাকে অস্পৃশ্য মনে করেছে। এভাবে অবহেলা, বঞ্চনার দিক থেকে গফুর চরিত্রটি কাঙালী চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

সারকথা: (গফুর এবং কাঙালী উভয়েই উঁচু শ্রেণি যারা শোষিত ও নির্যাতিত।)

(ঘ).নিষ্ঠুরতা এবং কুলগর্বে উদ্দীপকের তর্করত্ন 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের অধর রায়ের সার্থক প্রতিনিধি।

এক সময় বাঙালি হিন্দু সমাজে জাতবৈষম্য প্রবল আকার ধারণ করেছিল। জাতভেদের কারণে মানবত। বিভাজিত হয়ে পড়েছিল। উঁচু জাতের লোকেরা নীচ জাতের লোকদের ঘৃণা করত। তারা পারস্পরিক স্পর্শকেও অপবিত্র মনে করত।

'অভাগীর স্বর্গ' গল্পে এই অস্পৃশ্যতার চিত্র পাই গোমস্তা অধর রায়ের আচরণে। কাঙালী দুলের ছেলে বলে সে যেখানে দাঁড়িয়েছিল সেখানে গোবরজল ছিটিয়ে দিতে বলে সে। এখানেই শেষ নয়, দরিদ্র কাঙালীকে সামান্য একটা গাছ চাইতে এসে মার খেয়ে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। উদ্দীপকের গফুরও ব্রাহ্মণ তর্করত্নের দ্বারা অস্পৃশ্যতার শিকার হয়েছে। ধনী ব্রাহ্মণ তর্করত্নের কাছে সামান্য খড় চেয়ে সে ব্যর্থ হয়েছে। গফুরের দুঃখে তর্করত্নের হৃদয় গলেনি, বরং তার নিষ্ঠুরতাই এতে প্রবলভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তর্করত্ন ও অধর রায় উভয়ই ধনী, নিষ্ঠুর ও কুলগর্বে গর্বিত। এ কারণেই গফুর ও কাঙালীর মতো দরিদ্র-অসহায় মানুষেরা তাদের দ্বারা অবহেলিত-অত্যাচারিত হয়। এ দিক থেকে উদ্দীপকের তর্করত্ন 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের অধর রায়ের সার্থক প্রতিনিধি।

সারকথা:( নিষ্ঠুরতা ও কুলগর্বের দিক থেকে উদ্দীপকের তর্করত্ন 'অভাগীর স্বর্গ' গল্পের অধর রায়ের সার্থক প্রতিনিধি।)

অভাগীর স্বর্গ গল্পের গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন ১- গ্রামে কে নাড়ি দেখতে জানত?

উত্তর : গ্রামে ঈশ্বর নাপিত নাড়ি দেখতে জানত।

প্রশ্ন ২- ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী কয়দিনের অসুখে মারা গেলেন?

উত্তর : ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী সাত দিনের অসুখে মারা গেলেন।

প্রশ্ন ৩- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শরশ্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে কোন পদক প্রদান করে?

উত্তরঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ‘জগত্তারিণী’ পদক প্রদান করে।

প্রশ্ন ৪- সব ব্যাটারাই এখন বামুন কায়েত হতে চায়”- কথাটি কে বলেছিল?

উত্তর : এ কথাটি বলেছিল মুখােপাধ্যায় মহাশয়ের বড় ছেলে।

প্রশ্ন ৫- ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে জমিদারের গােমস্তার নাম কী?

উত্তর : ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে জমিদারের গােমস্তার নাম অধর রায়।

অভাগীর স্বর্গ জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর (PDF)

প্রশ্ন ৬- গ্রামের শাশানটি কোন নদীর তীরে অবস্থিত?

উত্তর : গ্রামের শাশানটি গরুড় নদীর তীরে অবস্থিত।

প্রশ্ন ৭- ‘কাঙালী’ কবিরাজকে কত টাকা প্রণামি দিয়েছিল?

উত্তর : কাঙালী কবিরাজকে এক টাকা প্রণামি দিয়েছিল।

প্রশ্ন ৮- কাঙালীকে জলপানির জন্য প্রতিদিন কয় পয়সা দেওয়া হতাে?

উত্তর : কাঙালীকে জলপানির জন্য প্রতিদিন দুই পয়সা দেওয়া হতাে।

প্রশ্ন ৯- মাকে পােড়াবি ত গাছের দাম পাঁচটা টাকা আনগে” কে বলেছিল?

উত্তর : কথাটি বলেছিল অধর।

অভাগীর স্বর্গ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন

প্রশ্ন ১০। অভাগীর স্বর্গ’ গল্পটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?

উত্তর : ‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পটি সুকুমার সেন সম্পাদিত ‘শরৎ সাহিত্যসমগ্র’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ড থেকে সংকলিত হয়েছে।


Read more: বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে mcq প্রশ্ন জেনে নিন [PDF]

অভাগীর স্বর্গ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন ১১- অশন’ শব্দটির অর্থ কী?

উত্তর : ‘অশন’ শব্দটির অর্থ খাদ্যদ্রব্য

প্রশ্ন ১২- কাঙালী ঘটি বাধা দিয়ে কী করল?

উত্তর : কাঙালী ঘটি বাধা দিয়ে কবিরাজকে এক টাকা প্রণামি দেয়।

প্রশ্ন ১৩- দারােয়ান কাকে মারতে গেল?

উত্তর : দারােয়ান কাঙালীকে মারতে গেল ।

প্রশ্ন ১৪- মাকে বিশ্বাস করাই কার অভ্যাস?

উত্তর : মাকে বিশ্বাস করাই কাঙালীর অভ্যাস।

প্রশ্ন ১৫- বৈকুণ্ঠের উইল’ শরৎচন্দ্রের কী জাতীয় গ্ৰশ্ব?

উত্তর : বৈকুণ্ঠের উইল’ শরৎচন্দ্রের উপন্যাস জাতীয় গ্রন্থ।

New comments are not allowed.*

Previous Post Next Post