বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

{getToc} $title={Table of Contents} $count={Boolean}


বিলাসী গল্পটি লিখেছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যে এক অন্যান্য অবদান রেখেছেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন

বিলাসী গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় “ভারতী” পত্রিকায় ১৩২৫ খ্রিস্টাব্দে। (বিলাসী গল্প সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর)

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন

শহরে আপনজন বলতে তেমন কেউ নেই সোহাগের। সম্প্রতি কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার প্রতি কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় না। এমনকি বন্ধুরাও সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে তাকে পরিত্যাগ করে। এ সময় সোহাগের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে নীলিমা, যার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। বাবা-মায়ের নিষেধ অমান্য করে নীলিমা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সোহাগের সেবা করে। নীলিমার নিবেদন দেখে বাবা-মায়ের ভুল ভাঙ্গে। সোহাগের বন্ধুরাও লজ্জিত হয় এবং বন্ধুর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন (১ নম্বর)

ক. কার সেবায় মৃত্যুঞ্জয় যমের মুখ থেকে ফিরে এসেছে?

খ. বিলাসী বিষপানে আত্মহত্যা করে কেন?

গ. উদ্দীপকের নীলিমা কিভাবে বিলাসী গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. বিলাসী গল্পের লেখকের প্রত্যাশাটি সুপ্ত রয়েছে উদ্দীপকে তা বাস্তব রূপ লাভ করেছে- মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো।

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (১ নম্বর)

ক. বিলাসীর সেবায় মৃত্যুঞ্জয় যমের মুখ থেকে ফিরে এসেছে।

খ. স্বামীর মৃত্যুর শোক সইতে না পেরে বিলাসী বিষপানে আত্মহত্যা করে। 

বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের মাঝে ছিল গভীর প্রেম। সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীকে আপন করে পাওয়ার জন্যই মৃত্যুঞ্জয় জাত বিসর্জন দিয়ে পুরোদস্তুর সাপুড়ে জীবন বেছে নিয়েছিল। নিয়তির নির্মম পরিহাসে তার মৃত্যু হয় সাপের কামড়েই। ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে বেঁচে থাকাটা মূল্যহীন বলে মনে হয় বিলাসীর কাছে। এ কারণেই সে বিষপানে আত্মহত্যা করে মৃত্যুঞ্জয়ের অনুগামী হয়।

গ. সেবাপরায়ণতা ও প্রেমের মহিমায় উদ্দীপকে নীলিমা বিলাসী গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রের সাথে সাদৃশ্য হয়ে উঠেছে। 

বিদেশি গল্পটি আবর্তিত হয়েছে বিলাসী নামক কমনিপুনা ও সেবাব্রতী একজন নারীকে ঘিরে। মৃত্যু পথযাত্রী মৃত্যুঞ্জয়কে সে সেবায করে সুস্থ করে তোলে। সাপুড়ে কন্যা হয়েও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে কায়স্থ বর্ণের মৃত্যুঞ্জয় কে ভালোবাসে সে। তার ভালোবাসার শক্তি মৃত্যুঞ্জয়কে সাহস জোগায় নিজের জাত বিসর্জন দিয়ে সাপুড়ে জীবন বেছে নিতে। অবশেষে সাপের কামড়ে মৃত্যুঞ্জয়ের অকাল মৃত্যু হলে বিলাসী নির্দ্বিধায় বেছে নেয় স্বেচ্ছামরণের পথ। 

উদ্দীপকে বর্ণিত নীলিমা ও সোহাগের বিয়ের কথা ঠিক হয়ে আছে। স্বজনহীন সোহাগ কোভিড- ১৯ এ আক্রান্ত হলে তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রায় সবাই তাকে পরিত্যাগ করে। এ অবস্থায় অসহায় সোহাগ পাশে পায় নীলিমাকে। নীলিমা করোনা ভাইরাস সংক্রমনের ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখেই নিজেকে যথাসম্ভব সুরক্ষিত রেখে সোহাগের সেবা করে। সত্যিকারের ভালোবাসার অনুভূতি যে নীলিমাকে এমন সেবাপরায়ণ ভূমিকা গ্রহণে প্রেরণা জুগিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আলোচ্য গল্পে কেন্দ্রীয় চরিত্র বিলাসীকে আমরা একই ভাবে সেবাব্রতি ও প্রেমময়ী ভূমিকা অবতীর্ণ হতে দেখি।

ঘ.”বিলাসী’ গল্পে মানবিক সমাজ নির্মাণের জন্য লেখকের প্রত্যাশা নিহিত রয়েছে, উদ্দীপকে যা বাস্তব রূপ লাভ করেছে।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিলাসী’ গল্পে প্রকাশিত হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী দুজন মানব-মানবীর অনন্যসাধারণ প্রেমের মহিমা, যা জাতিগত বিভেদের সংকীর্ণ সীমা ছাপিয়ে গিয়েছে। অন্ত্যজ শ্রেণির সাপুড়ে-কন্যা বিলাসীর সাথে উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয়ের প্রেম কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের দৃষ্টিতে ঘোর অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। গল্পে এ দুই নর-নারীকে কেন্দ্র করে প্রকৃত ভালোবাসার যে আখ্যান রচিত হয়েছে। তারই আলোয় ধরা পড়েছে রক্ষণশীল সমাজের অনুদারতা ও অমানবিকতার স্বরূপ।

উদ্দীপকে বর্ণিত সোহাগের আপনজন বলতে তেমন কেউ নেই। সম্প্রতি সে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হলে সংক্রমণের ভয়ে বন্ধুরাও তাকে ত্যাগ করে। এসময় সে সহযোগিতা পায় কেবল নীলিমার কাছ থেকে, যার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। নীলিমা তার বাবা- মায়ের নিষেধ, এমনকি সংক্রমণের ঝুঁকিও উপেক্ষা করে সোহানের সেবা করে। তার ভালোবাসার শক্তিই সোহানের প্রতি অবজ্ঞাকারীদের নাকে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে এবং এক পর্যায়ে সবাই তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়।

{getCard} $type={post} $title={Read more}

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন (২ নম্বর)

১. আমি যেকোনো ধরনের বর্ণবাদী বৈষম্যকে সবচেয়ে তীব্রভাবে ঘৃণা করি। সারাজীবন আমি এর বিরুদ্ধে পড়েছি; আমি এখনো লড়াই করি এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়ে যাব।’ নেলসন ম্যান্ডেলা।

২. আমরা এমন একটি সমাজের জন্য যুদ্ধ করছি, যেখানে মানুষের বর্ণ নিয়ে কেউ চিন্তা করবে না।” 

ক.দেবদাস শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কী ধরনের সাহিত্যকর্ম? ম্যান্ডেলা শিখনফল-

খ. মৃত্যুতায় নিজে রেঁধে খেত কেন? ব্যাখ্যা করো।

গ. ১ নং উদ্দীপকে ‘বিলাসী’ গল্পের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? আলোচনা করো। 

ঘ. ২ নং উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের অন্তর্লীন প্রত্যাশাকে তুলে ধরতে পেরেছে কি? বিশ্লেষণ করো। 

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর (২ নম্বর)

ক. ‘দেবদাস’ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি উপন্যাস ।

খ. মা-বাবা বা পরিজন না থাকায় মৃত্যুঞ্জায় নিজের খাবার নিজেই রান্না করে খেতো।

মৃত্যঞ্জয় একটি বিশাল পরনো বাড়িতে একা থাকতো। এক জাতি খুড়া তার মা-বাবা বা পরিজন কেউ ছিল না। সেই খুড়াও আ তার কুৎসা রটাত। ফলে তার দেখভালের মতো মানুষের অভাব ছিল। এ কারণে নিজের রান্নার দায়িত্ব মৃত্যুঞ্জায় নিজের কাঁধে তুলে নেয়। 

গ. ১ নং উদ্দীপকে ‘বিলাসী’ গল্পের অন্তরালে ফুটে ওঠা বর্ণ-বৈষম্যবিরোধী মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে।

‘বিলাসী’ গল্পে গরকার তৎকালীন সমাজে বিরাজিত বর্ণবৈষম্যের ভয়াবহ রূপটি উন্মোচন করেছেন। অসবর্ণের হওয়ায় সেই সম বিলাসী-মত্যুঞ্জয়ের বিয়েকে স্বীকৃতি দেয় না । উপরন্তু অন্নপাপের অজুহাতে তাদের নিপীড়িত করে গ্রামছাড়া করে। রক্ষণশীল সমাজের কোপে পড়ে বাধ্য হয়েই মৃত্যুঞ্জয়কে সাপুড়ে জীবন গ্রহণ করতে হয় এবং পরিণতিতে সর্পদংশনে মৃত্যু হয় তার।

১ নং উদ্দীপকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার একটি বিখ্যাত উক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। উক্তিটিতে বর্ণবাদ বিষয়ে তাঁর ব্যক্তিগত অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তিনি। বস্তুত, সাদা-কালোর এ বৈষম্যকে কোনোদিনই মেনে নিতে পারেননি তিনি। আর তাই এ অবস্থার নিরসনে সারাজীবন তিনি লড়াই চালিয়েছেন। উদ্ধৃত উক্তিটিতে ম্যান্ডেলার সে প্রত্যয়ই ফুটে উঠেছে। একইভাবে ‘বিলাসী’ গল্পে বিলাসী-মৃত্যুভায়ের করুণ পরিণতির মধ্য দিয়ে গল্পকার মূলত বর্ণপ্রথার কুপ্রভাবকেই তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন। যে বিবেচনায় ১ নং উদ্দীপকটিতে আলোচ্য গল্পের অন্তরালে ফুটে ওঠা বর্ণবৈষম্য-বিরোধী মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. ২ নং উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের অন্তলীন প্রত্যাশাকে তুলে ধরতে পেরেছে বলেই আমি মনে করি।

‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সেবা-শুশ্রুষা করে সুস্থ করে তোলে সাপুড়ের মেয়ে বিলাসী। পরবর্তীতে বিলাসীর গুণমুগ্ধ হয়ে তাকে ভালোবেসে বিয়ে করে মৃত্যুঞ্জয়। এ কারণে রক্ষণশীল সমাজের চাপে পড়ে জাত বিসর্জন দিয়ে সাপুড়ে হতে হয়। তাকে। আলোচ্য গল্পটিতে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের করুণ পরিণতির অন্তরালে মূলত বৈষম্যহীন পৃথিবীর প্রত্যাশা করেছেন লেখক।

উদ্দীপক-২ এ একটি বৈষম্যহীন মানবিক পৃথিবীর প্রত্যাশা ব্যক্ত হয়েছে। সেখানে নেলসন ম্যান্ডেলার প্রত্যাশা— একদিন বর্ণবৈষম্যের অবসান হবে। মানুষ মানুষকে মূল্যায়ন করবে মানবিক পরিচয়ের নিরিখে। সংগত কারণেই সেদিন মানুষের মাঝে সাদা-কালোর বৈষম আর থাকবে না। নেলসন ম্যান্ডেলা সে প্রভায়েরই মূল রূপকার। আলোচ্য গল্পেও বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের করুণ পরিণতির মধ্য দিয়ে তৎকালীন সমাজে জেঁকে বসা কপ্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন লেখক।

‘বিলাসী’ গল্পে গল্পকার উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে নিম্নবর্ণের সাপুড়েকন্যা বিলাসীর প্রণয়ের সম্পর্ককে তুলে ধরেছেন। তারা উভয়েই পরস্পরকে গভীরভাবে ভালোবাসতো । কিন্তু তৎকালীন বর্ণবিভক্ত সমাজ তাদের সেই সম্পর্ককে মেনে নেয়নি। উপরন্তু অপাে অজুহাতে বিলাসী- -মৃত্যুায়কে গ্রামছাড়া করেছে তারা। আলোচ্য গল্পটিতে বর্ণপ্রথার কুপ্রভাব তুলে ধরে মূলত এর অবসান করেছেন লেখক। একইভাবে, ২নং উদ্দীপকে একটি বর্ণবৈষম্যহীন পৃথিবীর লক্ষ্যে নেলসন ম্যান্ডেলার নিরন্তর সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বিলাসী গল্পে এবং ২ নং উদ্দীপক্ষে মূলত বৈষম্যহীন সমাজ প্রত্যাশার দিকটিই মুখ্য হয়ে উঠেছে। সে বিবেচনায় ২ নং উদ্দীপকটি আলোচ্য গল্পের অন্তর্নিহিত প্রত্যাশাকে তুলে ধরতে পেরেছে বলেই আমি মনে করি।

আরো পড়ুন: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি MCQ

 

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন (৩ নম্বর)

বাহিরের ছোপ আচড়ে সে লোপ

ভিতরের রং পলকে ফোটে,

বামুন, শুদ্র, বৃহত্তর, ক্ষুদ্র

কৃত্রিম ভেদ ধুলায় লোটে।

বংশে বংশে নাহিক তফাৎ

বনেদি কে আর গর বানোদি

দুনিয়ার সাথে গাথা দুনিয়াদ

দুনিয়া সবারি জনম-বেদী।

ক. অসুদ্ধ মৃত্যুঞ্জয় কাকে চিনতে পারল?

খ. একটা মৃতকর রোগী লইয়া থাকা কত কঠিন’- ব্যাখ্যা করো। 

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘বিলাসী’ গল্পে উল্লিখিত সমাজের পার্থক্য আলোচনা করো।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের লেখকের মনোভাবকে তুলে ধরতে পেরেছে কি। বিশ্লেষণ করো।

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (৩ নম্বর)

ক. অসুস্থ মৃত্যুক ন্যাড়াকে দেখে চিনতে পারল।

খ. অসুম্প মৃত্যুঞ্জাকে নিয়ে বিলাসীর জঙ্গল ঘেরা বাড়িতে বিনিদ্র রাত কাটানোর দুঃসহ অবস্থাকে বোঝাতেই প্রশ্নোত্ত্ব উক্তিটির অবতারণ হয়েছে।

মৃত্যুর একটি বিশাল পোড়োবাড়িতে একা থাকতো। মৃত্যুপথযাত্রী মৃত্যুঞ্জয়কে নিয়ে সেখানে কারও পক্ষে একা থাকাটা সত্যিকার অর্থেই কঠিন ছিল। এমন পরিস্থিতিতে মৃত্যুঞ্জয় মারা গেলে মৃতদেহ নিয়ে বিলাসীকে একা রাত জাগতে হতো। অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়কে নিয়ে বিলাসীর এমন দুঃসহ দিনযাপনের বিষয়টি চিন্তা করেই লেখক প্রশ্নোত্ত উক্তিটি করেছেন। 

গ. সমতার দৃষ্টিকোণ থেকে উদ্দীপকের কবিতাংশের সাথে বিলাসী গল্পে উল্লিখিত সমাজের পার্থক্য প্রতীয়মান হয়। 

‘বিলাসী’ গল্পে বর্ণবিদ্ধস্ত সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে। সে জাতি-ধর্মের বিভেদের বেড়াজালে আবদ্ধ ছিল। আর তাই বিদাসী- মৃত্যুক্ষয়ের প্রণয়ের সম্পর্ককে গ্রামবাসী মেনে নিতে পারে বস্তুত, হৃদয়বৃত্তির চেয়ে বর্ণপরিচয়ই সমাজের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই তথাকথিত সমাজের চাপে পড়ে বিলাসী মৃত্যুঞ্জয়কে, গ্রামছাড়া হতে হয়।

উদ্দীপকের কবিতাংশে কবির সাম্যবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তাঁর দৃষ্টিতে ধর্ম-বর্ণ বা বংশগত পরিচয় বাহ্যিক। এই কৃত্রিম পরিচয়ের নিরিখে মানুষের মাঝে বিভাজন কখনোই কাম্য হতে পারে না। ‘বিলাসী’ গল্পের সমাজব্যবস্থা এর বিপরীত। সেখানে মানবিকতার চেয়ে বর্ণ বিভাজনই অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। মানবিক বোধকে মূল্য দেয়নি বলেই সে সমাজ বিলাসী-মৃত্যুভারের সম্পর্ককে মেনে নিতে পারেনি। অর্থাৎ উদ্দীপকের কবিতাংশে ফুটে ওঠা উদারনৈতিক মনোভাবের বিপরীতে ‘বিলাসী’ গল্পে উল্লিখিত সমাজ অনুদার, অসহিষ্ণু ও বর্ণবাদে বিশ্বাসী। এ দিক থেকে উদ্দীপকের কবিতাংশের সাথে বিলাসী। গল্পে উল্লিখিত সমাজের প্রভেদ দেখা যায়।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘বিলাসী’ গল্পের লেখকের মনোভাবকে তুলে ধরতে পেরেছে বলেই আমি মনে করি।

‘বিলাপী পড়ে বিলাসী-মৃত্যুক্ষগ্নোর করুণ পরিণতির মধ্য দিয়ে তৎকালীন বর্ণবিভক্ত সমাজের বীভৎস রূপটি উন্মোচন করেছেন লেখক। রক্ষণশীল ও অনুদার সেই সমাজের স্বরূপ তুলে ধরে তিনি মূলত এমন অবস্থার অবসান কামনা করেছেন।

উদ্দীপকের কবিতাংশের কবি মানুষের সমতায় বিশ্বাসী। তাঁর দৃষ্টিতে মানুষের একটাই পরিচয় আর তা হলো সে মানুষ। এ কারণে ব্রাহ্মণ-শূদ্র বা বড়ো-ছোটোর কৃত্রিম প্রভেদ তিনি মানেন না। তাছাড়া বাহিরের রূপ যাই হোক না কেন সকলেরই রক্ত লাল। সকল একই পৃথিবীর অন্ন-জলে লালিত। সংগত কারণেই সাম্যবাদী কবির চোখে সকল মানুষই এক। আলোচ্য গল্পের অন্তরালে লেখকের মাঝেও একই মনোভাব ফুটে উঠেছে।

‘বিলাসী’ গল্পে গল্পকার উচ্চবর্ণের মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে নিম্নবর্ণের সাপুড়েকন্যা বিলাসীর প্রণয়ের সম্পর্ককে তুলে ধরেছেন। তারা উভয়েই পরস্পরকে গভীরভাবে ভালোবাসতো। কিন্তু তৎকালীন বর্ণবিভক্ত সমাজ তাদের সেই সম্পর্ককে মেনে নেয়নি। উপরন্তু অয়পাপের অজুহাতে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়কে গ্রামছাড়া করেছে তারা। আলোচ্য গল্পটিতে বর্ণপ্রথার কুপ্রভাব তুলে ধরে মূলত এর অবসান কামনা করেছেন লেখক। একইভাবে, উদ্দীপকের কবিতাংশেও সকল মানুষের অভেন কল্পনার মধ্যদিয়ে বৈষম্যহীন সমাজভাবনার প্রতিফলন ঘটেছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকের কবিতাংশটি আলোচ্য গল্পের লেখকের মনোভাবকে তুলে ধরতে পেরেছে বলেই মনে করি।

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন (৪ নম্বর)

টেলিভিশনে একটি সিনেমার দৃশ্য দেখছিল ছোট আফসান। নায়িকা নায়ককে বলছে: ‘বিশ্বাস করো রাজা, আমি তোমাকে ভালোবাসি। প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। নায়ক না রাণী না, তা হয় না। তুমি মালিক, আমি চাকর। তোমরা বড়লোক, আর আমরা গরিব। তোমার আর আমার প্রেম হতে পারে না। ছোট্ট আফসান কিছুতেই ভেবে পেল না যে রাজা ও রানার মধ্যে কেন প্রেম হতে পারে না।

ক. মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর পর বিলাসী কতদিন বেঁচেছিল?

খ. মৃত্যুঞ্জয় গ্রামের মুখ পোড়ায় কীভাবে? ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকের নায়ক রাজার সঙ্গে ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের বৈসাদৃশ্য তুলে ধরো।

ঘ.আফসানের মতো উদার মানসিকতার অধিকারী হলে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়াকে এমন পরিণতির বিশ্লেষণ করো।

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (৪ নম্বর)

ক. মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুর পর বিলাসী সাত দিন বেঁচেছিল। 

খ. সাপুড়েকন্যা বিলাসীকে বিয়ে করায় উঁচু বর্ণের মৃত্যুঞ্জয়ের গ্রামের মুখ পোড়ে।

 রোগশয্যায় ছিল তখন বিলাসী প্রাণপণ সেবা-শুশ্রূষা করে তাকে রোগমুক্ত করে। বিলাসীর আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে মৃত্যুঞ্জয় তাকে ভালোবেসে বিয়ে করে। উঁচু-নিচু নানান সম্প্রদায়ে বিভক্ত তৎকালীন সমাজ এ বিয়েকে মেনে নেয়নি উপরন্তু ঘটনাটিকে তারা গ্রামের মুখ পোড়ানো বলে অভিহিত করে।

গ.     অবস্থানগত দিক থেকে উদ্দীপকের নায়ক রাজার সঙ্গে ‘বিলাসী’ গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের রয়েছে। 

‘বিলাসী’ গল্পে আমরা অসাধারণ এক প্রেমিকপুরুষ মৃত্যুঞ্জয়ের সন্ধান পাই। বিলাসী। জাতের মেয়ে হলেও তার প্রতি আকর্ষণ কমে যায়নি মৃত্যুঞ্জয়ের। বরং বিলাসীর প্রতি প্রেমের প্রাবল্যে সে তার জাত বিসর্জন দিতেও দ্বিধা করেনি। উদ্দীপকের রাজার মধ্যে হয়তো প্রেমিকার প্রতি ভালোবাসার অভাব নেই। অনুদার সমাজের বিভেদরেখা অতিক্রম করার সাহস তার নেই। তাই সে তার প্রেমিকার ভালোবাসার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু ‘বিলাসী’ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় কোনো বাধার সামনে মাথা নত করেনি। সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সে নিম্নবর্ণের সাপুড়েকন্যা বিলাসীকে বিয়ে করে। শুধু তাই নয়, সমাজের চাপে নিজের সহায়-সম্পত্তি এমনকি বংশ গৌরব পর্যন্ত ত্যাগ করেছে ভালোবাসার মানুষটিকে পাওয়ার জন্য। মৃত্যুঞ্জয়ের এমন দৃঢ় অবস্থান এবং মানসিকতার দিকটি উদ্দীপকের রাজা চরিত্রে পরিলক্ষিত এদিক থেকে উদ্দীপকের নায়ক রাজার সঙ্গে আলোচ্য গল্পের মৃত্যুঞ্জয়ের বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ.     ‘বিলাসী’ গল্পে উল্লিখিত সমাজের মানুষেরা উদ্দীপকের আফসানের মতো উদার মানসিকতার অধিকারী হলে বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়কে করুণ পরিণতি বরণ করতে হতো না বলেই আমি মনে করি। ‘বিলাসী’ গল্পে উল্লিখিত সমাজের মানুষে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও রক্ষণশীল। ধর্মান্ধতার অন্ধকার তাদের মনকে এমনভাবে সংকুচিত করে রেখেছে যে, তারা মানুষকে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করতে পারেনি। জাতিগত বিভেদের সংকীর্ণতা তাদের চেতনাজুড়ে। এ কারণেই তারা বিলাসী আর মৃত্যুত্থানের সম্পর্ককে মেনে নিতে পারেনি। মানসিক সংকীর্ণতা হেতু বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি অমানবিক আচরণকেই তারা ধর্ম ও সম্মান রক্ষার মতো গৌরবের কাজ বলে মনে করেছে।

উদ্দীপকের আফসান চিন্তাভাবনার দিক থেকে অনেক উদার। সমাজের অপ্রয়োজনীয় জটিল ভাবনা তার শিশুমনকে স্পর্শ করেনি। তাই তার কাছে মানুষের শ্রেণিভিত্তিক পরিচয় বড় হয়ে ওঠেনি, যে গণ্ডি থেকে অধিকাংশ মানুষই বের হতে পারে না। এ কারণেই সিনেমার ধনী নায়িকার সাথে গরিব নায়কের সম্পর্ক না হওয়ার কোনো অর্থবহ কারণ খুঁজে পায় না সে। আলোচা গল্পে উল্লিখিত সমাজের মানুষদের মাঝে আফসানের বিপরীতধর্মী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

‘বিলাসী’ গল্পের অনুদার সমাজের মানুষেরা বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের প্রেমকে মূল্য দিতে পারেনি। বরং তাদের কারণেই এই যুগলকে করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। মৃত্যুঞ্জয়ের মৃত্যুকে তারা অন্নপাপের ফল বলে মনে করেছে। বিলাসীর মৃত্যু তাদের কাছে হয়ে উঠেছে পরিহাসের বিষয়। এককথায় গল্পে বর্ণিত সমাজের মানুষের মাঝে মানসিক সংকীর্ণতা ও অমানবিকতার দিকটিই মুখ্য হয়ে উঠেছে। পক্ষান্তরে উদ্দীপকের আফসানের চিন্তা-ভাবনা ‘বিলাসী’ গল্পের মানুষের তুলনায় অনেক উন্নত ও উদার। তার শিশুমনকে ভেদ-বৈষম্যের পঙ্কিলতা এখনো স্পর্শ করেনি। সংগত কারণেই প্রেমিক ও প্রেমিকার নিঃশর্ত ভালোবাসা কেন বিত্ত ও শ্রেণি পরিচয়ের গণ্ডিতে ঠোকর তবে এই ব্যাপারটি ভাবিয়ে তোলে তাকে। ‘বিলাসী’ গল্পে উল্লিখিত সমাজ আফসানের মতো উদার হলে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়ের পরিণতি এমন হতো না। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ। 

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন (৪ নম্বর)

সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে অপুর বিয়ে ঠিক হয়েছে ধনাঢ্য ঘরের মেয়ে চম্পার সাথে। কিন্তু বিয়ের ঠিক দুইদিন আগে অপুর মা-বাবা বেঁকে বসেন। তাদের কাছে খবর এসেছে যে চম্পার মরহুম দাদা এতিমখানার একজন বাবুর্চি ছিলেন। নিজের সামান্য উপার্জনে মেধাবী ছেলেকে শহরে রেখে অতি কষ্টে পড়াশোনা করিয়েছেন। সেই ছেলের কারণেই আজ তাদের পরিবারের এত নাম-যশ। এমন ইতিহাস আছে যে পরিবারে, সেখানে কিছুতেই ছেলের বিয়ে দেবেন না অপুর মা-বাবা। মা-বাবার মানসিক সংকীর্ণতা প্রত্যক্ষ করে অপু তার অত্যন্ত মর্মাহত হয়।

ক. গোখরা সাপ পোষার শখ ছিল কার?

খ. কে বলিবে এ আমাদের সেই মৃত্যুঞ্জয় – উক্তিটি বুঝিয়ে দাও ।

গ. উদ্দীপকের অপুর বাবা-মায়ের মানসিতার সাথে বিলাসী’ গল্পের সমাজব্যবস্থার তুলনা করো।

ঘ.অপুর মর্মাহত ও লজ্জাবোধ করা কতখানি যৌক্তিক? ‘বিলাসী’ গল্প অবলম্বনে মতামত দাও।

বিলাসী গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর (৪ নম্বর)

ক গোখরা সাপ পোষার শখ ছিল গল্পকথক ন্যাড়ার।

খ. ‘বিলাসী’ গল্পে কায়স্থ ঘরের সন্তান মৃত্যুঞ্জয়ের সাপুড়ে রূপ দেখে গল্পকথক ন্যাড়া উদ্ধৃত উক্তিটি করেছে। 

গ. অন্ত্যজ শ্রেণির মেয়ে বিলাসীকে বিয়ে করায় অনুদার ও রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ কর্তৃক মৃত্যুঞ্জয়কে গ্রামছাড়া হতে হয়। কিন্তু এতে সে দমে যায়নি। জাত বিসর্জন দিয়ে বছরখানেকের মধ্যেই সে পুরোদস্তুর সাপুড়ে হয়ে ওঠে। মাথায় গেরুয়া পাগড়ি বড়ো বড়ো দাড়ি-চুল, গলায় রুদ্রাক্ষ ও পুঁতির মালায় সজ্জিত মৃত্যুঞ্জয়কে দেখে বোঝার উপায় থাকে না যে, কোনো একসময় সে কায়স্থ ঘরের সন্তান ছিল। জাত বিসর্জন দেওয়ার পর স্বল্প সময়েই সে নিজেকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছিল যে, ন্যাড়া পর্যন্ত অবাক না হয়ে পারেনি। আলোচা উক্তিটিতে মৃত্যুঞ্জয়কে নিয়ে গল্পকথক ন্যাড়ার সেই উপলব্ধিই ফুটে উঠেছে।

উদ্দীপকের অপুর মা-বাবার মানসিকতা ‘বিলাসী’ গল্পের বর্ণবিভক্ত ও সংকীর্ণ সমাজব্যবস্থাকেই যেন মনে করিয়ে দেয়।

“বিলাসী’ গল্পে লেখক তৎকালীন বর্ণবিভক্ত সমাজব্যবস্থার এক বাস্তব চিত্র অংকন করেছেন। বংশগৌরবের সংকীর্ণ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সে সমাজের লোকজন নিজেদের ভেদ-বৈষম্যের বেড়াজালে আবদ্ধ করে রেখেছিল। এ কারণেই মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীর মানবিক সম্পর্ককে তারা মূল্য দেয়নি। উপরন্তু জাত বিসর্জনের ভয়ে নিপীড়নের মাধ্যমে তাদের গ্রামছাড়া করে।

উদ্দীপকের অপুর মা-বাবা তুচ্ছ কারণে অপুর বিয়ে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, যা তাদের সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয় বহন করে। চম্পার যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব যেখানে সর্বাধিক মর্যাদা পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন চম্পার পারিবারিক ইতিহাসকে। আলোচ্য ‘বিলাসী’ গল্পেও একই বিষয়ের অবতারণা ঘটেছে। সেখানেও উচ্চবর্ণের ছেলে মৃত্যুভয়ের সঙ্গে সাপুড়ের মেয়ে বিলাসীর বিয়ের বিষয়টিকে তৎকালীন সমাজ কিছুতেই মেনে নেয়নি। আর তাই অন্নপাপের অজুহাতে বিলাসী-মৃত্যুঞ্জয়কে গ্রামছাড়া করে তারা; অর্থাৎ উদ্দীপকের অপুর মা-বাবার মানসিকতা ‘বিলাসী’ গল্পের গ্রামবাসীর মানসিকতারই অনুরূপ। মানুষের জীবনের চেয়ে বংশগৌরবই তাদের কাছে বড়ো। 

ঘ. ‘বিলাসী’ গল্পের শিক্ষার আলোকে বলা যায়, মানবিক বোধসম্পন্ন যেকোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রেই উদ্দীপকের ঘটনায় মর্মাহত ও লজ্জিত হওয়াটা খুবই যৌক্তিক।

‘বিলাসী’ গল্পটি অনুদার ও রক্ষণশীল সমাজের দর্পণ স্বরূপ। বর্ণবিভক্ত সমাজব্যবস্থার নির্মম নিষ্পেষণে অকালে করে গেছে বিলাসী ও মৃত্যুঞ্জয়ের প্রাণ। বস্তুত, মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন কোনোকিছুই সমাজের তথাকথিত কাঠামোর চেয়ে মূল্যবান হয়ে ওঠেনি আলোচ্য গল্পের গ্রামবাসীর কাছে।

উদ্দীপকের ধনাঢ্য ঘরের মেয়ে চম্পার সাথে অপুর বিয়ে ঠিক হলেও চম্পার মৃত দাদার কর্মজীবনের পরিচয় পেয়ে অপুর মা-বাবা বিয়ে ভেঙে দিতে চান। চম্পার দাদা বাবুর্চি ছিল বলেই তাদের যত আপত্তি। চম্পার যোগ্যতা ও মানবিক মূল্যবোধের তুলনায় তারা গুরুত্ব দিয়েছেন তার পারিবারিক ইতিহাসকে; যদিও সেটি আপত্তি করার মতো কোনো কারণ হতে পারে না। ‘বিলাসী’ গল্পে উল্লিখিত, গ্রামবাসীর মানসিক সংকীর্ণতাও আমাদের বিবেককে একইভাবে নাড়া দেয়।

‘বিলাসী’ গল্পে বর্ণবিভক্ত সমাজের ভয়াবহ রূপটি উন্মোচিত হয়েছে। সংকীর্ণচিত্তের স্বার্থপর মানুষদের কাছে বিলাসী তার সম্প্রসারণত পরিচয়ের কারণে নিন্দিত ও ঘূর্ণিত হয়েছে। অন্যদিকে, উদ্দীপকের চম্পার মরহুম দাদা এতিমখানায় সামান্য বাবুর্চির চাকরি করতেন— এই সংবাদে দিশেহারা হয়ে পড়েন অপুর মা-বাবা। পাত্রী হিসেবে তার সকল যোগ্যতা তুচ্ছ হয়ে পড়ে চম্পার এই পরিচয়ের কাছে। অর্থাৎ উদ্দীপক ও ‘বিলাসী’ পদ্মা উভয়ক্ষেত্রেই মানসিক সংকীর্ণতার বিষবাষ্প বাধিত করে তোলে সংবেদনশীল মনকে। সংগত কারণেই একজন সচেতন ও বিবেকবান মানুষ হিসেবে মা-বাবার মানসিক সংকীর্ণতা অপুকে পীড়িত করেছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকের অপুর মর্মাহত ও লজ্জিত হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *