সাত কলেজ নাকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
প্রায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মাঝে একটা প্রশ্ন লক্ষ্য করা যায় সেটি হলো সাত কলেজ ভালো হবে নাকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়?
সাত কলেজের সার্টিফিকেটের মান ভালো নাকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের মান ভালো?
আজকে আমরা এই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।
সাত কলেজের সুবিধা সমূহ
সাত কলেজের প্রথম এবং প্রধান সুবিধা হচ্ছে সরকারি সাতটি কলেজ-ই ঢাকায় অবস্থিত। ২০১৭ সালের পরে সরকারি সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অধিভুক্ত করা হয়ে থাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়ার পূর্বে সরকারি সাতটি কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল।
ঢাকায় অবস্থিত সরকারি সাতটি কলেজ ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজ নামে পরিচিত।
সরকারি সাতটি কলেজের মাঝে সবচেয়ে গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে আছে ঢাকা কলেজ। পিছিয়ে নেই তিতুমীরও।
- ঢাকা কলেজ (শুধু ছেলেদের জন্য)
- ইডেন মহিলা কলেজ (শুধু মেয়েদের জন্য)
- তিতুমীর কলেজ (উভয়)
- মিরপুর বাংলা কলেজ (উভয়)
- কবি নজরুল কলেজ (উভয়)
- বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ (শুধু মেয়েদের জন্য)
- সোহরাওয়ার্দী কলেজ (উভয়)
সাত কলেজ তাদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক যারা ঢাকায় পড়তে চান এবং যাদের স্বপ্ন শহরে থাকা এবং শহরে পড়া।
ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের সার্টিফিকেট কে দিয়ে থাকে?
ঢাবি অধিভুক্ত সাতটি কলেজের সার্টিফিকেট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে থাকে। সার্টিফিকেটের উপর লেখা থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তারপর যেই কলেজ থেকে আপনি পাস করেছেন সেই কলেজের নাম।
সাত কলেজে হলের সুবিধা আছে কি?
সরকারি সাতটি কলেজের মাঝে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাড়া বাকি ছয়টি কলেজে নির্দিষ্ট হল, বাসের সুবিধা এবং থিয়েটার ,লাইব্রেরি সবাই রয়েছে।
সাত কলেজে কি সেশনজোট আছে?
না ,বর্তমানে সাত কলেজে কোন সেশনজোট নেই, একটা সময় ছিল কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন তা রিকোভার করে নিয়েছে।
সাত কলেজ খরচ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিভুক্ত সাতটি কলেজে খরচ খুবই কম। ডিপার্টমেন্ট ভিত্তিক ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার মাঝে কলেজ খরচ হয়ে যাবে।
সাত কলেজের অসুবিধা সমূহ
প্রতিবছর অসংখ্য শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজে পরীক্ষা দিয়ে থাকে। সরকারি সাতটি কলেজে প্রায় ২৬ হাজারের মতো আসন রয়েছে। এতো বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের মাঝে অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রাম থেকে পড়তে আসে। তাদের মাঝে যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাদের খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী যানবাহন খরচ এবং থাকা খাওয়া মিলে প্রতিমাসে অন্তত ৬-৭ হাজার টাকার মত প্রয়োজন হয়। যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল তাদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা। মাস শেষে আমরা হিসেব করে দেখলাম একজন শিক্ষার্থীর প্রতি মাসে সব মিলে ৭-৮ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়।
তবে শহরাঞ্চলে নিজের খরচ নিজে বহন করা সম্ভব যদি আপনি পরিশ্রমী হয়ে থাকেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সাত কলেজের সিলেবাস নির্দিষ্ট কলেজ গুলো দিয়ে থাকে, কিন্তু প্রশ্ন করে ঢাবি এবং উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে ঢাবি। এই জন্য মাঝেমধ্যে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাপ্য ফলাফল পাচ্ছে না।
আরেকটি কথা বলে রাখা ভালো, ভর্তি হয়ে গেলেন আর না পড়েই পাস চলে আসবে এটা ভেবে থাকলে আপনি অনেক বড় ভুল করবেন।
আপনাকে অবশ্যই ভালো পড়াশোনা করে পাশ করতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য:- ৭৫% উপস্থিতি থাকতে হবে। ৭৫% প্রস্তুতি বাধ্যতামূলক অনেকেই বলে থাকে কিন্তু দেখা যায় যে যাদের স্যারদের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকে তাদের খুব একটা সমস্যা হয় না।
আরো পড়ুন: কিভাবে সাত কলেজের ভর্তি প্রস্তুতি নিবেন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা সমূহ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি আপনার বাড়ির নিকটবর্তী কোনো কলেজে পড়তে পারবেন। যার দূরত্ব আপনার বাড়ি থেকে কম। যার জন্য যাতায়াতের সমস্যা পোহাতে হয় না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি কলেজগুলোতে খরচ তুলনামূলক কম। সাত কলেজে যেমন খরচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি কলেজগুলোতে একই খরচ।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কোর্স রয়েছে।
যেমন:- সাধারণ অনার্স, প্রফেশনাল অনার্স, ডিগ্রি।
কিন্তু সাত কলেজে শুধু একটিই কোর্স রয়েছে আর সেটি হলো অনার্স।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো সুবিধা হলো সিজিপিএ উঠানো তুলনামূলক ভাবে সহজ সাত কলেজের তুলনায়।
ন্যাশনালে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় না। এসএসসি এবং এইচএসসি বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্টের ওপর সাবজেক্ট এবং কলেজ দেওয়া হয়ে থাকে।
কিন্তু ঢাবি অন্তর্ভুক্ত সাতটি কলেজে ভর্তি হতে হলে আপনাকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আসন দখল করতে হয়।
অনেকেই প্রশ্ন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কি ভালো জব পাওয়া যায়?
অবশ্যই পাওয়া যায়। জব নির্ভর করবে আপনার যোগ্যতার ওপর।
এক্ষেত্রে, একটি পজিটিভ থিংকিং তৈরি হয় পাবলিক ভার্সিটির শিক্ষার্থীদের জন্য এবং সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার খরচ
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ধরনের কলেজ আছে।
সরকারি কলেজ
বেসরকারি কলেজ
সরকারি কলেজ গুলোতে সাধরণত সাত কলেজের মতোই খরচ। ১০-১২ হাজার টাকা (কম বেশি হতে পারে)।
বেসরকারি কলেজ গুলোতে খরচের পরিমাণ কিছুটা বেশি।
এক্ষেত্রে, কলেজ বিবেচনায় খরচে ভিন্নতা রয়েছে।
যেমন, তেজগাঁও কলেজে বছরে ৪৫-৪৬ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। গ্রামের কোনো কলেজে যার পরিমাণ ২০-২৫ হাজার টাকা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুবিধা সমূহ
প্রথমেই বলতে হবে সরকারি কলেজ গুলোতে যদি আপনার চান্স না হয়, তাহলে সাত কলেজের তুলনায় আপনার খরচটা বেশি গুনতে হবে।
ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি যেই সার্টিফিকেট প্রদান করে, তার থেকে ঢাবি অন্তর্ভুক্ত সাতটি কলেজের সার্টিফিকেটের মূল্য অবশ্যই বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ তাদেরকে ঢাবি সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে।
কিন্তু এটিও বলে রাখা ভালো আপনি যদি সাত কলেজ থেকে বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও পাস করে আসেন আপনার যদি দক্ষতা না থাকে তাহলে আপনি চাকরি পাবেন না। কিন্তু কেউ যদি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে দক্ষ হয় তাহলে সে পাবলিকের ওই শিক্ষার্থী থেকেও এগিয়ে থাকবে। তাই বলা যায় আপনি যদি আপনার জায়গা থেকে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার চাকরি অবশ্যই হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ কলেজ গুলোতে ভালো লাইব্রেরি নেই। কলেজ ক্যাম্পাস মন মতো হয় না। যদিও শহর অঞ্চলের কলেজ গুলোতে বেশ ভালো সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু গ্রাম অঞ্চলের কলেজগুলোতে তেমন কোন সুবিধা নেই বললেই চলে। সেই তুলনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
সবশেষে এটাই বলবো আপনার সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিবেন।
আপনি যদি মনে করেন খরচ বহন করতে পারবেন। ভালো পড়াশোনা করতে পারবেন। তাহলে সাত কলেজে ভর্তি হওয়া উত্তম। কারণ শহরে বেশ কিছু সুবিধা ভোগ করা যায়। প্রতিযোগিতা থাকে।
আর আপনার যদি আর্থিক সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে আপনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি কলেজ গুলোতে ভর্তি হতে পারেন।
আমার ব্যক্তিগত মতবাদ যদি জানতে চান, আমি সাত কলেজকে এগিয়ে রাখবো; কারণ এখানে পরীক্ষা দিয়ে টিকতে হয়। সার্টিফিকেট ঢাবি দিয়ে থাকে। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি কলেজ গুলো এগিয়ে রয়েছে।
সবশেষে এটাই বলবো আপনি যেখানেই পড়েন না কেন, যদি আপনি দক্ষ হন এবং পরিশ্রমী হন তাহলে আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
ধন্যবাদ!