ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কিভাবে ঘটে – ডেঙ্গু জ্বর কি ?

ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কিভাবে ঘটে – ডেঙ্গু জ্বর কি ?

আপনি কি ডেঙ্গু রোগের বিস্তার সম্পর্কে জানা নিয়ে উদগ্রীব। তাহলে আমাদের এই আজকের ব্লগ সম্পূর্ণ আপনার জন্য।

ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কিভাবে ঘটে - ডেঙ্গু জ্বর কি


{getToc} $title={Table of Contents} $count={Boolean}

আমরা আমাদের এই ব্লগে আলোচনা করব ডেঙ্গু রোগ কি, ডেঙ্গু কিভাবে ছড়ায়, ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ কি কি, ডেঙ্গু রোগ কাদের বেশি হয়, ডেঙ্গু কিভাবে চিহ্নিত করবেন, ডেঙ্গু রোগ হলে কখন ডাক্তার দেখাবেন। 

এই সকল বিষয় সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত আমাদের এই ব্লগে নিচে আলোচনা করব। তাহলে চলুন আর দেরি না করে এই সকল বিষয় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

ডেঙ্গু জ্বর কি ?

ডেঙ্গু জ্বর হলো এক ধরনের ট্রপিকাল জ্বর। যেটি একপ্রকার এসিড মশার কামড়ে হয়ে থাকে। সাধারণত এসিড মশার কামড়ে ৩ থেকে ১৫ দিনের ভিতরে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে। 

এই ৩ থেকে ১৫ দিনের ভিতর রোগীর শরীরে বিভিন্ন রকম ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পায়। যে লক্ষণ গুলোর মধ্যে অন্যতম লক্ষণ হল, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, প্রচন্ড জ্বর, পেশি ও শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে প্রচুর পরিমাণে ব্যথা, তকে ফুসকুড়ি হওয়া।

আরও পড়ুন: ঢাকা বাংলাদেশের কার্ডিওলজি/হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের তালিকা। 

আক্রান্ত ব্যক্তি এ সকল সমস্যার কারণে ভীষণভাবে নেতিয়ে পরে। তবে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তি ২ থেকে ৭ দিনের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি আরোগ্য লাভ করে।

তবে কখনো কখনো এই রোগের কারণে রোগীর শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় জ্বর দেখা দেয়। রোগীর শরীরের রক্তপাত এবং রক্তে প্লাজমা নির্গমন এবং রক্তে অনুচক্রিকার মাত্রা হ্রাস পায়। 

এছাড়াও, ডেঙ্গু সিনড্রোমের ক্ষেত্রে রোগীর রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে, যা জীবনের রোগীর জীবনের জন্য অনেক বড় ঝুঁকিপূর্ণ।

কিভাবে ডেঙ্গু রোগের বিস্তার ঘটে ?

এডিস মশা ডেঙ্গু রোগের প্রধান বাহক হিসেবে খুবই পরিচিত। এডিস অ্যালবপিকটাস মশা ও এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার জন্য অধিক পরিমাণে দায়ী। এই মশাগুলো চেনার একটি সহজ উপায় হচ্ছে এদের গায়ে এক প্রকার ডোরাকাটার মত দাগ থাকে। 

এরা আকারে অন্য মশার থেকে অনেক বড় হয়ে থাকে। এবং বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধ স্থানে এদের বংশবৃদ্ধি হয়। ডেঙ্গু মশা বংশ বৃদ্ধি করার জন্য জলাবদ্ধ স্থান এদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। তাই শুষ্ককালে এই মশা এবং ডেঙ্গু রোগ খুবই কম দেখা যায়। 

আপনি একটি জিনিস মাথায় রাখবেন সেটি হলো এডিস মশার দিনের বেলা কামড়ায়। এবং সেই সময়ে ডেঙ্গু রোগ বেশি ছড়ায়। ডেঙ্গু রোগ বহনকারী মশা যদি কখনো কোন ব্যক্তিকে কামড়ায় তাহলে সে ব্যক্তি খুব তাড়াতাড়ি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় ।

ডেঙ্গু মশা কামড়ানোর ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যেই ডেঙ্গু রোগীর জ্বরে আক্রান্ত হয়। তখন যদি একটি জীবাণুমুক্ত মশাও ওই ডেঙ্গু রোগীকে কামড় দেয় ওই মশাও ডেঙ্গু রোগ বহনকারী মশা হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়া একের পর এক মশা ডেঙ্গু রোগ বহনকারী হয়ে ওঠে।

ডেঙ্গু প্রধান দুই প্রকার ১. ক্লাসিকাল ডেঙ্গু ফিভার । ২. হেমোরেজিক ফিভার।

ডেঙ্গু রোগ কখন হয়?

মে মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত সাধারণত যখন গরম পড়ে এবং বৃষ্টি হয় তখন ডেঙ্গু রোগের বিস্তার হবে। শীতের সময় ডেঙ্গু রোগের প্রভাব সাধারণত ঘটে না। শীতকালে ডেঙ্গু মশার লাভা বেঁচে থাকেনা। 

বর্ষার মৌসুমী চারিদিক জলাবদ্ধ সৃষ্টি হয় যার কারণে ডেঙ্গু ভুসার লাভা জীবিত থাকে এবং বংশবিস্তার করে। সাধারণত শহরের উচ্চবিত্ত এবং বড় বড় দালানকোঠার মাঝে এই ডেঙ্গু মশার প্রজনন ঘটে। হলে সেই এলাকার বাসিন্দারা বেশি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। 

অন্যদিকে বস্তি বা গ্রামের লোকেরা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত কম হয় বা আক্রান্ত হয় না বললেই চলে। ডাক্তারি মোতাবেক একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ চার বার ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ডেঙ্গু রোগের সাধারণত চার ধরনের ডেঙ্গু ভাইরাস রয়েছে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের সেরা নিউরোলজিস্ট ডাক্তার | Neurology Doctor

সাধারণত একজন ব্যক্তি প্রথম বা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলে তার জন্য দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুর রোগ আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকে এবং যেটি তার জন্য মারাত্মক রুপ ধারণ করতে পারে। এবং ওই কারণে ওই ব্যক্তি মৃত্যু ঘটতে পারে। 

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ যেটি শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকি শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি লক্ষ্য করা যায়।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ কি কি?

দেশে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই মশা বাহিত রক্তের যদি সঠিক সময় নির্বাচন না করা যায় তাহলে এটি জীবনের জন্য বড় রকমের হুমকি সৃষ্টি করে। বর্তমানে করনার মহামায়া কারণে অনেকেই জ্বর হলে সেটিকে করোনা ভাইরাস হিসেবে ধরে নেয়। 

তবে জ্বর শুধুমাত্র করোনা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে না এটি ডেঙ্গু জ্বরের কারণও হয়ে থাকে। চলুন এবার নিচে জেনে নেওয়া যাক ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো কি কি।

ডেঙ্গুর ক্লাসিক্যাল :

  • তীব্র জ্বর এবং সারা শরীরে ব্যথা হয়।
  • জ্বরের তাপমাত্রা ১০৫  পর্যন্ত উঠতে পারে।
  • ডেঙ্গু জ্বরে পেটে ব্যথার অনুভূতি হতে পারে।
  • হাড়, কোমর, পিঠ, মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
  • মাথাব্যথা এবং চোখের পেছনের ব্যথা ।
  • বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে।
  • রোগী প্রায়ই অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করে ।

সাধারণত, জ্বর ৪ থেকে ৫ দিনের পর নিজে নিজে চলে যায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে ২ বা ৩ দিন পরে পুনরায় জ্বর আসতে পারে।

ডেঙ্গু হেমোরেজিক :

  • শরীরের বিভিন্ন স্থান রক্তপাত হয়
  • পায়খানায় তাজা রক্ত ,কালো পায়খানা 
  • নারীদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক সময়ে মাসিক রক্তক্ষরণ।
  • রোগীর বুক ও পেটে পানি জমা 

ডেঙ্গু শক সিনড্রোম :

  • রক্তচাপের আকস্মিক পতন
  • নাড়ির গতি অস্বাভাবিকভাবে দুর্বল হওয়া
  • শরীরের হাত, পা শীতল হয়ে যাওয়া
  • প্রস্রাব হ্রাস পায়
  • রোগীর হঠাৎ জ্ঞান হারানো
  • রোগীর মৃত্যুর ঝুকি থাকে

ডেঙ্গু রোগের প্রতিরোধ কিভাবে করবে

ডেঙ্গু রোগের প্রতিরোধ সহজ সাতটি উপায়ে আপনি করতে পারেন। সেই সহজ সাতটি উপায় আমরা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করছি। যেগুলো জানলে আপনি ডেঙ্গু রোগের প্রতিরোধ করতে পারবেন।

  • মশার বাসস্থান কমাতে হবে।
  • সময়মতো বাড়ির দরজা জানালা বন্ধ রাখতে হবে যাতে ঘরে মশা প্রবেশ করতে না পারে।
  • প্রতিরক্ষামূলক জামা কাপড় পড়তে হবে যাতে মশা কামড় না দিতে পারে।
  • ঘুমানোর সময় অবশ্যই আপনি এবং আপনার পরিবারকে মশারি টাঙ্গাতে হবে।
  • বাড়িতে এবং ঘরের কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবেনা।
  • ঘরে অবশ্যই সব সময় আলো বাতাস সম্পূর্ণ রাখতে হবে।

ডেঙ্গু রোগ কখন ডাক্তার দেখাবেন

সাধারণত ডেঙ্গু রোগের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে এই জ্বর স্বাভাবিকভাবেই সেরে যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে এই জ্বর মারাত্মক রূপ ধারণ করে রোগীকে মৃত্যুর মুখে পর্যন্ত ঠেলে নেয়। 

তবে নিম্নলিখিত লক্ষণ গুলো উপস্থিত হলে সাথে সাথে ডাক্তার দেখানো উচিত। নিচে ডেঙ্গু রোগে কখন ডাক্তার দেখাবেন সেই লক্ষণগুলো বিস্তারিতভাবে দেয়া হলো।

  • শরীরের যে কোন স্থান থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় রক্তক্ষরণ হলে
  • রক্তে প্লাটিনামের সংখ্যা কমে গেলে
  • প্রচন্ড পরিমাণে শ্বাসকষ্ট হলে
  • আক্রান্ত ব্যক্তির পেট ফুলে পানি জমা হলে
  • আক্রান্ত ব্যক্তি প্রস্তাবের পরিমাণ কমে গেলে
  • আক্রান্ত ব্যক্তির জন্ডিসে আক্রান্ত হলে
  • আক্রান্ত ব্যক্তির অতিরিক্ত মাত্রা শরীরে দুর্বলতা অনুভব হলে এবং মাথা ঘুরালে
  • আক্রান্ত ব্যক্তির তীব্র মাথাব্যথা বা বারবার বমি হলে

ডেঙ্গু রোগের বিস্তার কিভাবে ঘটে তার পরিশেষ আলোচনা

সময়ের সাথে সাথে ডেঙ্গু রোগের লক্ষণগুলোর পরিবর্তন ঘটেছে। তবে ডেঙ্গু রোগ সাধারণত বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণে এডিস মশার জন্ম থেকে এই রোগের বিস্তার ঘটে থাকে। যা গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করে যাচ্ছে। যদি সময় মত একজন ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা না করা হয় তাহলে সেটি তার জীবনে মৃত্যু ঘনি আনতে পারে। 

তাই এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য আপনার বসতবাড়ির আঙ্গিনা এবং আপনার পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এবং বৃষ্টির সময় আপনার ঘরে এবং বাহিরে যে যে জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে সে জায়গাগুলো পরিষ্কার করতে হবে। 

না হলে সে জায়গাগুলোতে এডিস মশার জন্ম নিয়ে আপনার এবং আপনার পরিবারকে ডেঙ্গুর রোগে আক্রান্ত করতে পারে। এবং এই কারণে আপনার আশেপাশের প্রতিবেশীদেরও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত করতে পারে। 

আর্টিকেল থেকে আমরা যা জানলাম তা হলো এই ডেঙ্গুর একটি ভয়াবহ আকার সৃষ্টি করেছি। তাই ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচার জন্য কিছু প্রতিকার রয়েছে যেগুলো আমাদেরকে মেনে চলতে হবে। ডেঙ্গু রোগ হলে আতঙ্কিত না হয়ে প্রচুর পরিমাণে বিশ্রাম নিন। 

প্রচুর পরিমাণে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান এবং পানি পান করুন এতে করে আপনার দিনগুলো খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে। এবং আপনি আরোগ্য লাভ করবেন।

ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে যদি আপনাদের আরো কোন কিছু জানার থাকে বা মন্তব্য প্রকাশ করার থাকে তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। আমরা সেই অনুযায়ী আপনাদেরকে আরো তথ্য দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *