অপরিচিত গল্পটি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি এই গল্পের মাধ্যমে সমাজের যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে সমালোচনা করেন। এবং তিনি বুঝান এটি একটি হীন মানসিকতার লক্ষণ।
নিন্মে অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।
অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল-১
ভবিষ্যতের সুখ-স্বপ্নে বিভোর রিপন-রিতার বিয়ের দিন হঠাৎ দৃশ্যপট পাল্টে গেল। বর রিপনের বাবা বিয়ের আগেই যৌতুকের সমস্ত টাকা হাতে পেতে চায় । কনের পিতা সুজিত বাবু মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে সেই শর্তে রাজি হলেও কনে রিতা তা মানল না। বর পক্ষকে সে অপমান করে তাড়িয়ে দিল।
ক. বিয়ের সময় অনুপমের বয়স কত ছিল?
খ. আমি তো চমকিয়া উঠিলাম’- কথাটি বুঝিয়ে লেখো ।
গ. সুজিত বাবুর সাথে শম্ভুনাথ চরিত্রটি কোন দিক দিয়ে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ? আলোচনা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের রিতা ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর চেয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদে বেশি সক্রিয় “- মন্তব্যটির গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরো।
{getCard} $type={post} $title={Read more}
অপরিচিতা গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন
১- নম্বর প্রশ্নের উত্তর
(ক) বিয়ের সময় অনুপমের বয়স ছিল ২৩ বছর।
(খ) উপরিউক্ত কথাটির মাধ্যমে কল্যাণীর সু-মধুর কণ্ঠ শুনে অনুপমের চমকে ওঠা ভাবকে বোঝানো হয়েছে।
কানপুর স্টেশনে অনুপম একটি নারীকণ্ঠ শুনে মুগ্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে অনুপমের হৃদয়পটে সেই কন্ঠস্বরটি বাজতে থাকে। পরে যখন অনুপম গাড়িতে জায়গা পাচ্ছিল না, এমন সময় সেই মেয়েটি অনুপমের মাকে লক্ষ করে বলে, তাদের গাড়িতে জায়গা আছে এবং সেখানে গিয়ে বসতে। আর এভাবেই সেই কণ্ঠটি আবার শুনে অনুপম চমকে ওঠে। এখানে মূলত, কল্যাণীর আশ্চর্যসুন্দর কণ্ঠস্বর শুনে বিরহী অনুপমের একটি মানসিক অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে।
(গ) উদ্দীপকে সুজিত বাবুর সাথে শম্ভুনাথ চরিত্রটি ব্যক্তিত্ববোধের প্রকাশের দিক দিয়ে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
‘অপরিচিতা’ গল্পে শম্ভুনাথ সেন একজন ব্যক্তিত্ববোধ সম্পন্ন মানুষ। তিনি নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে যৌতুকলোভী পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিতে চাননি। তাই অনুপমের মামা যখন মেয়ের গয়না যাচাইয়ের জন্য সেকরা সাথে করে আনে তখন তার আত্মসম্মানে লাগে। এজন্য বরপক্ষকে সসম্মানে বিদায় করে দেন।
উদ্দীপকের কনের পিতা সুজিত বাবুর মধ্যে গল্পের শম্ভুনাথ সেনের ব্যক্তিত্ববোধের কোনো প্রতিফলন লক্ষ করা যায় না। তিনি বরপক্ষের অন্যায় দাবি মেনে নিয়েই মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়েছেন, যা গল্পের শম্ভুনাথ বাবু করেননি। এখানে সুজিত বাবুর সাথে শম্ভুনাথ চরিত্রটি বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
(ঘ) উদ্দীপকের রিতা সরাসরি অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেও ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণী তা করতে না পারায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ বলে বিবেচিত।
যুগ যুগ ধরে যৌতুক প্রথার নির্মমতার শিকার হচ্ছে নারীরা। হীন-স্বার্থবাদী পুরুষতান্ত্রিকতা নারীকে অর্থকড়ির মানদণ্ডে বিচার করে। বর্তমানে কিছু শিক্ষিত সচেতন নারী যৌতুকের মতো সামাজিক কু-প্রথাগুলোর প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে। এমন বাস্তবতা ‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণীর মাঝে পরিলক্ষিত হয়। সে যৌতুকের বিরুদ্ধে পিতার অসম্মানকে নিরবে সমর্থন করে নিজের যৌতুকবিরোধী চেতনাকে জানান দিয়েছে।
উদ্দীপকের রিতা অন্যায়ের বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহী নারী। সে যৌতুকলোভীদের অপমান করে বিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ব্যক্তিত্বপূর্ণ ও স্বাধীন নারীসত্তার কারণে সে অন্যায় প্রথাকে প্রশ্রয় দেয়নি। কিন্তু ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীকে প্রত্যক্ষভাবে এ ধরনের প্রতিবাদী ভূমিকায় দেখা যায়নি।
অপরিচিত গল্পে যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে নারীর নিরব প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে। বরের মামা যখন বিয়ের আগে যৌতুকের গয়না যাচাই করতে গিয়ে অপমানজনক আচরণ করে তখন কল্যাণীর বাবার বিয়ে ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি সে নীরবে সমর্থন করে। কিন্তু বরপক্ষের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো প্রতিবাদী ভূমিকা পালন করেনি। অন্যদিকে উদ্দীপকের রিতা কিন্তু নীরব থাকেনি। সে সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ করে বরপক্ষকে তাড়িয়ে দেয়। এ প্রেক্ষিতে বিচারে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি গ্রহণযোগ্য ও যথাযথ।
{getCard} $type={post} $title={Read more}
অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল-২
বিয়ের আসরে দেনা-পাওনা বিষয়কে কেন্দ্র করে তুমুল বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে বরের চাচা বিয়ে ভেঙে দেয়ার ঘোষণা দেন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আতিক চাচার কথায় সাড়া দিয়ে আসর থেকে ফিরে আসে। কিন্তু তার চোখে ভেসে ওঠে আফিয়ার বিবর্ণ মুখ, তার পিতার করুণ চাহনি।
ক. অনুপমের আসল অভিভাবক কে?
খ. এসব কথায় আমার সম্পূর্ণ অনধিকার- কোন প্রসঙ্গে কেন বলা হয়েছে?
গ. উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের বৈসাদৃশ্য চিহ্নিত করে আলোকপাত কর।
ঘ.’যৌতুক প্রথা বিবাহ সম্বন্ধে বিপর্যয় বয়ে আনে’— উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের আলোকে তোমার মতামত দাও।
অপরিচিতা গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন
২- নম্বর প্রশ্নের উত্তর
(ক) অনুপমের আসল অভিভাবক তার মামা।
(খ) অনুপমের যৌতুকলোভী মামা যখন কনের সব গহনা যাচাই করতে চাইলেন তখন কনের বাবা অনুপমের মতামত জানতে চাইলেন তখন কনের বাবা অনুপমের মতামত জানতে চাইলে অনুপম এ কথাটি বলেন।
অনুপমের বিয়ের লগ্ন উপস্থিত হলে তার লোভী মামা কল্যাণীর সমস্ত গয়না পরখ করার জন্য স্যাকরাকে ডেকে নিয়ে আসেন। তখন কনের বাবা শম্ভুনাথ সেন অনুপমের মতামত জানতে চান। কিন্তু অনুপমের ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তার অভাবের কারণে সে তার মামার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না। তাই মামার অন্যায় আবদারেও চুপ করে থাকে এবং বলে এসব ব্যাপারে কথা বলার অধিকার তার নেই।
(গ) উদ্দীপকের আতিকের বিয়ে ভাঙার ঘটনাটি প্রেক্ষাপটগত দিক থেকে ‘অপরিচিতা’ গল্পের সাথে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
অপরিচিতা” গল্পটিতে যৌতুক প্রথার বিরোধী কাহিনী বিধৃত হয়েছে। এ গল্পে পিতা শম্ভুনাথ সেন ও কন্যা কল্যাণীর ঘৃণ্য যৌতুকপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অনুপমের মামা যখন কন্যার গয়না যাচাই করতে চান তখন কন্যার বাবা সে বিয়ে ভেঙে দেন।
উদ্দীপকে দেখা যায়, যৌতুকের জন্য আফিয়ার বিয়ে ভেঙে যায়। বরের চাচা দেনা-পাওনাকে কেন্দ্র করে বিয়ে ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন। উদ্দীপকে বরের পক্ষ থেকে বিয়ে ভাঙা হলেও গল্পে কনেপক্ষই বিয়ে ভেঙে দেন। যৌতুক নিয়ে কন্যার অবমাননার প্রতিবাদে শম্ভুনাথ সেন কন্যা-সম্প্রদানে অসম্মতি জানান। শম্ভুনাথ সেনের প্রবল ব্যক্তিত্ববান চরিত্রটি উদ্দীপকে অনুপস্থিত। উদ্দীপকে বরপক্ষের যৌতুকের জন্য বিয়ে ভেঙে দেওয়া এবং কনের পক্ষের বিপর্যস্ততার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে গল্পে কনেপক্ষই অপমানের প্রতিবাদে বিয়ে ভেঙে দেয় ।
(ঘ) উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পে উভয়ক্ষেত্রেই দেখা যায় যৌতুকের কারণে দুটো বিয়েই ভেঙে যায়, তাই বলা যায়, যৌতুক প্রথা বিবাহ সম্বন্ধে বিপর্যয় বয়ে আনে।
‘অপরিচিতা’ গল্পে অমানবিক যৌতুক প্রথার নির্মমতা তুলে ধরা হয়েছে। এ গল্পের সমগ্র ঘটনার কেন্দ্রে আছে এই সামাজিক অসংগতি। অনুপমের মামা বিয়ের আগে কল্যাণীর গহনা পরীক্ষা করা নিয়ে যে নীচতার পরিচয় দিয়েছেন, তাতে যৌতুক প্রথার নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে ধারণা লাভ করা ‘অপরিচিতা’ গল্পে যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে নারীর নিরব প্রতিবাদ ফুটে যায়। আর এ যৌতুক প্রথার কারণেই কল্যাণী ও অনুপমের বিবাহ সংঘটিত হয় না।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বিয়ের আসরে দেনা-পাওনাকে কেন্দ্র করে তুমুল বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে বরের চাচা বিয়ে ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন। এমনকি বর আতিকের বিয়ে করার ইচ্ছে থাকলেও অসহায়ভাবে বিয়ের সভা ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এমনকি কনে এবং কনের বাবার বিবর্ণ চেহারা দেখেও সে চাচার সিদ্ধান্তের বাইরে যায় না।
উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্প উভয়ক্ষেত্রেই যৌতুকপ্রথার নির্মমতা উন্মোচিত হয়েছে। ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের নিস্পৃহ মনোভাব এবং তার মামার যৌতুক নিয়ে বাড়াবাড়ির কারণে বিয়েটি ভেঙে যায়। শম্ভুনাথ সেন কন্যার লগ্নভ্রষ্ট হওয়ার লৌকিকতাকে অগ্রাহ্য করে বিয়েটি প্রত্যাখ্যান করে। অন্যদিকে উদ্দীপকেও বরের চাচার যৌতুকলোভী মনোভাব প্রকাশিত | হয়েছে। বরের চাচা যৌতুকের লোভে বিয়ে ভেঙে দেন। উভয়ক্ষেত্রেই দেখা যায় যৌতুকপ্রথার কারণে দুটো সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারেনি। বিবাহের পূর্বেই সম্পর্কগুলো ভেঙে যায়। তাই উল্লিখিত মন্তব্যটি যথার্থ।
{getCard} $type={post} $title={Read more}
অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল-৩
হৈমন্তী গল্পে তৎকালীন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কর্তৃত্বপরায়ণতা ও যৌতুক প্রথার কুফলের একটি বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছে। সংলাপের মধ্য দিয়ে তৎকালীন সমাজের মধ্যবিত্তের অন্তঃবাস্তবতা ফুটে উঠেছে। উপমা, উৎপ্রেক্ষা, চিত্রকল্প, রূপক, অনুপ্রম, সমাসোক্তি প্রভৃতি অলংকার এখানে সার্থকতার সাথে ব্যবহৃত হয়েছে। আর এর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে হৈমন্তী ও অপু। সর্বোপরি বিষয়বৈচিত্রে, অন্যান্য চরিত্র-চিত্রন, বক্তব্য বিষয় প্রকাশে অনুভূতির প্রখরতা প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যগুণে এ গল্পটি হয়ে উঠেছে বাংলা সাহিত্যের এক অনুপম রীতি এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি ছোটগল্প ।
ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প সর্বপ্রথম কত বছর বয়সে প্রকাশিত হয়?
খ. ‘প্রমাণ হইয়া গেছে আমি কেহই নই’- এটি দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপক অবলম্বনে ‘অপরিচিতা’ গল্পটির সমাজবাস্তবতাআলোচনা করো।
ঘ.অপরিচিতা’ ছোটগল্প হিসেবে কতটুকু সার্থক, উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
{getCard} $type={post} $title={Read more}
অপরিচিতা গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন
৩-নম্বর প্রশ্নের উত্তর
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম ছোটগল্প মাত্র ষোল বছর বয়সে প্রকাশিত হয়।
(খ) আলোচ্য উক্তিটির মধ্যে অনুপমের ব্যক্তিত্বহীনতার দিকটি পেয়েছে।
অনুপম শিক্ষিত যুবক হয়েও ব্যক্তিত্ববিবর্জিত পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায় পুতুল। শম্ভুনাথ বাবুর কাছে একথা প্রমাণিত হওয়ায় বিয়ে ভেঙে দেওয়ার সময় অনুপমের সাথে তিনি একটি কথা বলাও প্রয়োজন মনে করেননি। তাই অনুপম নিজের অবস্থান বোঝাতে গিয়ে এই বললেন যে, “প্রমাণ হইয়া গেছে আমি কেহই নই।”
(গ) উদ্দীপকের মতো ‘অপরিচিতা’ গল্পেও পুরুষতান্ত্রিক অমানবিকতা যৌতুক প্রথার মতো ঘৃণ্য সমাজবাস্তবতার দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের সমাজে এখনো হীন পুরুষতান্ত্রিকতার অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা সংঘটিত হয়। এর একটি অন্যতম বিষয় যৌতুক প্রথা ও নারী নির্যাতন। সমাজে নারীদের হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। নারী শিক্ষার অপ্রতুলতায় নারীরা নানাভাবে নিগৃহীত হয়। নারীর জীবনের চাইতে যৌতুকের অর্থকে বেশি মূল্য দেওয়া হয়। এ কারণে নারী জীবনে অনেক সময় করুণ পরিণতি নেমে আসে। সামাজিক এমন গূঢ় বাস্তবতা উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পে ফুটে উঠেছে।
উদ্দীপকে বর্ণিত ‘হৈমন্তী’ গল্পে তৎকালীন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কর্তৃত্বপরায়ণতা ও যৌতুক প্রথার কুফলের একটি বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছে। ‘অপরিচিতা’ গল্পেও পুরুষতান্ত্রিক ও যৌতুকপ্রথার কেন্দ্রীয় একটি অপ্রীতিকর সমাজবাস্তবতা ফুটে উঠেছে। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা শম্ভুনাথ তার মেয়ে কল্যাণীকে বিয়ে দিতে গিয়ে যৌতুক প্রথার শিকার হন। বরপক্ষের চাহিদামতো অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার দিলেও বরের মামা স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। স্বর্ণ খাঁটি কিনা তা পরখ করার জন্য অনুষ্ঠানে স্যাকরা । নিয়ে যায় এবং অলংকারের ফর্মগুলো কাগজে টুকে নেয়, যাতে পরে কম না দেওয়া হয়। কনের পিতাকে এমন সন্দেহ করা এবং যৌতুক নিয়ে এতোটা হীনতা ও নিচতা প্রদর্শন করায় শম্ভুনাথ কল্যাণীকে এ পাত্রের সাথে বিয়ে দিতে আর রাজি হননি। ঘৃণ্য যৌতুক প্রথার কারণে কল্যাণী বৈবাহিক জীবন থেকে বঞ্চিত হয়। হৈমন্তী গল্পের মতো হীন পুরুষতান্ত্রিক ও যৌতুক প্রথার নির্মম সমাজবাস্তবতা ‘অপরিচিতা’ গল্পেও সার্থকভাবে লক্ষ করা যায়।
(ঘ) ঘটনাপ্রবাহ, চরিত্র রূপায়ণ ও সার্থক সংলাপ- সবমিলিয়ে ‘অপরিচিতা’ একটি সার্থক ছোটগল্প।
‘অপরিচিতা’ গল্পে সমাজের একটি বিশেষ প্রথার উপর ভিত্তি করে একজন নারী ও পুরুষের জীবনের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে। বিয়ের আসরে বরের মামার গয়না নিয়ে গর্হিত আচরণ এবং বর অনুপমের নিষ্ক্রিয়তার বিয়েটি ভেঙে যায়। অনেকদিন পর অনুপম ও কল্যাণীর সাক্ষাৎ হয় এবং অনুপম জানতে পারে, কল্যাণী আর বিয়ে করবে না। নারী শিক্ষা প্রসারে সে | নিজেকে নিয়োজিত করেছে।
হৈমন্তী’ গল্পে হৈমন্তী ও অপুর ক্ষেত্রেও বিয়োগাত্মক পরিণতি ঘটে। এখানেও যৌতুক প্রথার করুণ বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছে। অপরিচিতা’ গল্পের মতো ‘হৈমন্তী’ গল্পেও তৎকালীন সমাজের বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছে। দুটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে ঘটনাপ্রবাহ, সংলাপ ও সমাপ্তি রচনার ক্ষেত্রে হৈমন্তী একটি সার্থক ছোটগল্পের উদাহরণ। এটি রবীন্দ্রনাথের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছোটগল্প।
উদ্দীপক ও গল্প উভয়ক্ষেত্রে সমাজের বাস্তবচিত্র ধরা পড়েছে। উদ্দীপকে অপু ও গল্পে অনুপম দুজনের প্রেমানুভূতিতে নায়িকাকে নিয়ে ভাবনার সময়ে নানা রূপক ও চিত্রকল্পের অবতারণা হয়। দুটি গল্পের শেষেই নায়ক- নায়িকার বিয়োগাত্মক পরিণতি দেখা যায়। দুটি গল্পেই চরিত্র চিত্রায়ণে রবীন্দ্রনাথ তার স্বভাবসুলভ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন । তাই, ‘অপরিচিতা’ ছোটগল্প হিসেবে পুরোপুরি সার্থক।
{getCard} $type={post} $title={Read more}
অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সৃজনশীল-৪
সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি গ্রামে বিয়ে করতে এসে বরপক্ষ মোটরসাইকেল ও সোনার চেইন দাবি করে। পাত্রীপক্ষের সামর্থ্য না থাকায় তারা অসম্মতি জানায়। অনেক অনুনয়- বিনয় করে বিয়েটা হওয়ার জন্য। কিন্তু বরপক্ষ রাজি না হলে বিয়ে ভেঙে যায় এবং কন্যাপক্ষ বরের মাথা ন্যাড়া করে দেয়।
ক.বিয়ের সময় অনুপমের বয়স কত ছিল?
খ. অনুপমের মামা স্যাকরাকে বিয়ে বাড়িতে এনেছিল কেন?
গ.উদ্দীপকের বরের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম চরিত্র তুলনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের ঘটনাটি ‘অপরিচিতা’ গল্পে বর্ণিত সামাজিক অসংগতির দিকটি তুলে ধরেছে কী? তোমার যুক্তি দাও।
অপরিচিতা গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন
৪-নম্বর প্রশ্নের উত্তর
(ক) বিয়ের সময় অনুপমের বয়স ছিল ২৩ বছর।
(খ) অনুপমের মামা যৌতুকলোভী এবং অত্যন্ত হীন মানসিকতার মানুষ হওয়ায় বিয়ের গয়না পরীক্ষা করতে সেকরাকে বিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলো। কল্যাণীর বাবা শম্ভুনাথ সেন কল্যানীর বিয়েতে নগদ পণের সঙ্গে গয়না দিতে চান। অনুপমের মামা শম্ভুনাথ সেনের কথায় আস্থাশীল ছিলেন না। কন্যাপক্ষ যে গয়না দেবে তা আসল না নকল সেটি পরীক্ষা করার জন্য অনুপমের মামা বিয়ে বাড়িতে সেকরাকে সঙ্গে এনেছিল। সেকরা সমস্ত গয়নার ঘাঁটিত্ব প্রমাণ করেন।
(গ) বরপক্ষের যৌতুক নিয়ে বাড়াবাড়ি ও অসৌজন্যমূলক আচরণের দিক থেকে উদ্দীপকের বরের সাথে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম চরিত্রের মিল রয়েছে।
‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপম উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা সত্ত্বেও ব্যক্তিত্বহীন ও পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায়। মামার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সে কোনো সিদ্ধান্তই গ্রহণ করতে পারে না। তার মামার অপমানের কারণে ও তার ব্যক্তিত্বহীনতায় কন্যার পিতা বিয়ের আসর থেকে ফিরিয়ে দেয়। অনুপমের এই স্বাধীন ব্যক্তিত্ব ও মানসিক দৃঢ়তার অভাবের মিলটুকু উদ্দীপকের বরের মধ্যেও দেখা যায়।
উদ্দীপকের বরপক্ষ পাত্রীপক্ষের কাছে যৌতুক হিসেবে মোটরসাইকেল ও ২ সোনার চেইন দাবি করে। আর্থিক অনটনের জন্য পাত্রীপক্ষ যৌতুক প্রদানে অসমর্থ হয়। বরপক্ষ তাদের ইচ্ছে পূরণ হয়নি বলে বিয়েটা ভেঙে ৩ দেয়। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে কোথাও বরের কোনো ভূমিকা পরিলক্ষিত হয় না। এতে বরের হীনমন্যতা ও ব্যক্তিত্বহীনতাই ভেসে ওঠে। কন্যাপক্ষ ৪ বরের ওপর তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে গিয়ে বরের মাথা ন্যাড়া করে দেয়। তাই উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, উদ্দীপকের বর সংঘটিত সমস্যার সাথে “অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমের যথেষ্ট মিল পাওয়া যায়।
(ঘ) উদ্দীপকের ঘটনাটি ‘অপরিচিতা’ গল্পে বর্ণিত সামাজিক অসংগতি | উদ্দীপক হিসেবে চিহ্নিত যৌতুকপ্রথার কুফলের দিকটি তুলে ধরেছে। ‘অপরিচিতা’ গল্পে যৌতুকপ্রথার সামাজিক অসংগতি চিহ্নিত করা হয়েছে। যৌতুকপ্রথার বিরুদ্ধে সকলের সম্মিলিত প্রতিরোধের চিত্র এখানে উঠে দুর্বল এসেছে। গল্পের সমগ্র ঘটনার কেন্দ্রে আবর্তিত হয়েছে এই সামাজিক অসংগতি। অনুপমের মামা বিয়ের আগে কল্যাণীর গহনা পরীক্ষা করা নিয়ে যে নীচতার পরিচয় দিয়েছেন, তাতেই সামাজিক বাস্তবতায় যৌতুকপ্রথার নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
উদ্দীপকেও আলোচ্য গল্পের মতোই যৌতুকপ্রথার অসংগতি বর্ণিত হয়েছে। বরপক্ষের মোটরসাইকেল ও সোনার চেইন দাবি মূলত যৌতুকের দাবি অপরি মেটাতে অক্ষম বলে বরপক্ষ এই বিয়ে ভেঙে দেয়। কনেপক্ষের কোনো অনুরোধই তারা শোনেনি। যৌতুকের এই সামাজিক অভিশাপের দিকটি সুরবান উদ্দীপকের মতো ‘অপরিচিতা’ গল্পেও আলোকপাত করা হয়েছে। একটি বিয়ের উদ্দীপক ও ‘অপরিচিতা’ গল্পের উভয়ক্ষেত্রেই যৌতুকপ্রথার নির্মমতার উন্মেষ ঘটেছে। ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের নিস্পৃহ মনোভাব তার মামার বাড়াবাড়ির দিকটিকে প্রশ্রয় দেয়। তেমনি উদ্দীপকেও বরপক্ষের যৌতুকলোভী মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের প্রশ্ন ঘটনাটি ‘অপরিচিতা’ গল্পে বর্ণিত যৌতুকপ্রথার মতো সামাজিক অসংগতির দিকটিই তুলে ধরেছে।
অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ৫
মাতৃস্নেহের তুলনা নাই কিন্তু অতিস্নেহ অনেক সময় অমঙ্গল আনায়ন করে। যে স্নেহের উত্তাপে সন্তানের পরিপুষ্টি, তাহারই আধিক্যে সে অসহায় হইয়া পড়ে। মাতৃহৃদয়ে মমতার প্রাবল্য, মানুষ আপনাকে হারাইয়া আপন শক্তি মর্যাদা বুঝিতে পারে না। দুর্বল অসহায় পক্ষীশাবকের মত চিরদিন স্নেহাতিশয্যে আপনাকে সে একান্ত নির্ভরশীল মনে করে। ক্রমে জননির পরম সম্পদ সন্তান অলস, ভীরু, দুর্বল, পর নির্ভরশীল হইয়া মনুষ্যত্ব বিকাশের পথ হইতে দূরে সরিয়ে যায়।
(ক) অনুপমের বয়স কত বছর?
(খ) বাংলাদেশের মধ্যে আমি একমাত্র পুরুষ যাহাকে কন্যার বাপ বিবাহ হইতে নিজে ফিরাইয়া দিয়েছে ‘ বলতে কী বোঝানো হলো?
(গ) মাতৃ স্নেহের আধিক্যে ” পর নির্ভরশীল হইয়া মনুষ্যত্ব বিকাশের পথ হইতে দূরে সরিয়ে যায়। ” উদ্দীপকে এই মন্তব্যের সাদৃশ্যমূলক প্রভাব রয়েছে ‘ অপরিচিতা ‘ গল্পে অনুপম চরিত্র বুঝিয়ে লেখ।
(ঘ) উদ্দীপকে বর্ণিত মাতৃস্নেহের আধিক্যে অনুপম চরিত্রে বিকাশ ব্যাহত হয়েছে ঠিকই কিন্তু গল্পের পরিণতিতে বৃত্তভাঙ্গা বভিন্ন এক ব্যক্তি হিসেবে তাকে পাওয়া যায় – মন্তব্যটি তোমার মতামত সহজ যাচাই কর।
অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল সৃজনশীল প্রশ্ন ৫ এর উত্তর
(ক) অনুপমের বয়স ২৭ বছর ।
(খ) বাংলাদেশের মধ্যে আমি একমাত্র পুরুষ যাহাকে কন্যার বাপ বিবাহ হইতে নিজে ফিরাইয়া দিয়েছে এই কথা বলেছিল অনুপম। অনুপমের যখন বিয়ে ঠিক হয় তখন পন সম্বন্ধে দুই পক্ষে পাকাপাকি কথা ঠিক হয়ে গিয়েছিল। বিয়ে ঠিক হওয়ার পরে তারা যখন কনে বাড়িতে গেল তখন অনুপমের মামা কল্যাণীর পিতা শম্ভুনাথ বাবুকে বললেন তিনি বিয়ে কাজ শুরু হইবার আগে কনের সমস্ত গহনা যাচাই করে দেখবেন। এই কথা শম্ভুনা বাবুর আত্মসম্মানে আঘাত হানে তারপর তিনি বিবাহ তাহাদের সঙ্গে ভেঙে দেন। এই প্রসঙ্গে অনুপম বলে যে সে একমাত্র পুরুষ যাহাকে কন্যার বাপ বিবাহ হইতে নিজে ফিরাইয়া দিয়েছে।
(গ) মা ও মাতার মতের বাইরে গিয়ে অনুপম নিজের ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি বলে চরিত্রে মন্তব্যটির প্রভাব রয়েছে। উদ্দীপকে বলা হয়েছে যে মাতৃস্নেহ অবশ্যই একজন সন্তানের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু অতীত নিয়ে অনেক সময় অমঙ্গল ডেকে আনে স্নেহের উত্তাপে সন্তান অসহায় হয়ে পড়ে। মাতৃস্নেহের আধিক্যে আপন শক্তির মর্যাদা সে বুঝতে পারে না। ফলে ক্রম শেষে অলস, ভীরু, দুর্বল ও পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
এতে করে তার মনুষ্যত্বের বিকাশের পথ হতে সে দূরে সরে যায়। এই সকল বৈশিষ্ট্য আমরা অপরিচিতা গল্পে অনুপমের চরিত্রে দেখতে পাই। অনুপমের মাতার আদেশে মেনে চলার ক্ষমতা আছে। অনুপম বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের সময়ের সেই বাঙালি যুবক যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেও ব্যক্তিত্বহীন। হ্যাপিবাদ তন্ত্রের কাছে সে একজন অসহায় পুরুষ। পার্টি দেখলে আজও মনে হয় সে যেন মায়ের কোল সংলগ্ন শিশু। যৌতুক নিয়ে ফোন কল্যাণীর বাবা চরম অবমাননা করা হয়েছিল তখন সে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে ছিল। এবং মামার কথা মেনে বিয়ে বাড়ি ত্যাগ করেছিল। সব সময় মাতৃজ্ঞা পালনকারী অনুপম নিজের অজান্তে ভীরু, দুর্বল ও কাপুরুষ হয়ে পড়ে। অতএব এ থেকে বুঝা যায় মাতৃ স্নেহের আধিক্য পরনির্ভরশীল হইয়া মনুষত্ব বিকাশের পথ হইতে দূরে সরিয়ে যায়।
উদ্দীপকে এই উক্তিটির প্রভাব রয়েছে অপরিচিতা গল্পের অনুপমের চরিত্রে।
(ঘ) উদ্দীপকে বর্ণিত মাতৃস্নেহের আধিক্য অনুপম চরিত্রে বিকাশ ব্যাহত হয়েছে ঠিকই কিন্তু গল্পের পরিণতিতে বৃত্তভাঙ্গা ভিন্ন এক ব্যক্তি হিসেবে তাকে পাওয়া যায়। – মন্তব্যটি যথার্থ।
অপরিচিতা গল্পে অনুপম সর্বদা মাতৃআজ্ঞা পালনকারী এক সন্তান। উদ্দীপকে বলা হয়েছে অতিরিক্ত পাত্রী স্নেহে মানুষের জীবনে অমঙ্গল ডেকে আনে। যা আমরা অনুপমের ক্ষেত্রেও দেখতে পাই। কল্যাণীর সাথে বিয়ে ঠিক হওয়া থেকে শুরু করে বিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত অনুপম সব ব্যাপারে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। কোন ঘটনাতেই সে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেনি। এতে তার চরিত্রে যথাযথ বিকাশ হয়নি বলে বোঝা যায়।
কিন্তু কল্যাণের সাথে বিয়ে ভাঙার কম অনুপমের কিঞ্চিত পরিবর্তন হয়। পরবর্তীতে সে মামার নিষেধ অমান্য করে। মাতৃ আজ্ঞা অবজ্ঞা করে কল্যাণীর বাবার সাথে দেখা করতে যায় এবং তাকে আবারও বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কল্যাণী যদিও তা নাকচ করে দেয় তবে অনুপম আসা ছাড়েনি। সে মায়ের বাড়ি ছেড়েছে কিন্তু একমাত্র সন্তান বলে মা তাকে ছাড়তে পারেনি অর্থাৎ অনুপম তার ভীরু সত্তা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। সে এখন নতুন ব্যক্তি সম্পন্ন একজন মানুষ।
অতএব এ থেকে বুঝা যায় উদ্দীপকে বর্ণিত মাতৃস্নেহের আধিক্যে অনুপম চরিত্রে বিকাশ ব্যাহত হলেও গল্পের পরিণতিতে বৃত্তভাঙ্গা ভিন্ন এক ব্যক্তি হিসেবে তাকে পাওয়া যায়।
{getCard} $type={post} $title={Read more}
অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল সৃজনশীল প্রশ্ন ৬
অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ৬
(ক) রবীন্দ্রনাথের সর্বশেষ গল্পের নাম মুসলমানির গল্প।
(খ) উক্তিটির দ্বারা কল্যাণীর কাছাকাছি থাকতে পাড়ার সুযোগ লাভের সার্থকাতাকে বোঝানো হয়েছে।
অনুপমের সাথে কল্যাণীর বিয়ে ভেঙ্গে গেলে সে নারী শিক্ষার ব্রত গ্রহণ করে এবং আর বিয়ে করবে না বলে পন করে। তাই রেলে কল্যাণীর পরিচয় লাভের পর যখন অনুপম কানপুড়ে তার কাছে আসে তখন কল্যাণী তাকে বিয়ে করবে না জেনেও অনুপম তার সাথে সাথে থাকে, তাকে ছোটখাটো কাজে সাহায্য করে। যদিও কল্যাণীকে সে আপন করে আজও পায়নি। তারপর ওই সামান্য জায়গা পাওয়া এই অনুপম তার জীবনের চরম সার্থকতা বলে মনে করে।
(গ) অনুপমের কল্পনায় অপরিচিতা ছিল উদাস, বিরহ ব্যথায় কাতর। কিন্তু উদ্দীপকের মেয়েটির মাঝে এমন কোন ভাব লক্ষ্য করা যায়নি। বিয়ে ভেঙ্গে যাবার পর অনুপম খবর পায় অন্য জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসলেও কল্যাণী তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাই সে কল্পনা করে কল্যাণী নিশ্চয়ই তার বিরহে কাতর। সে ঠিক মত খায় না, সন্ধ্যা হয়ে গেলেও সে চুল বাঁধতে ভুলে যায়, তার দুই চোখ থেকে জলে ভরা। অনুপম কল্পনা করে কল্যাণীর কপালে চন্দন আঁকা, গায়ে তার লাল শাড়ি, মুখে তার লজ্জায় ভরা । কিন্তু তার হৃদয়ের খবর অনুপম জানেনা। সেভাবে অনাবৃষ্টির দিনেও ফুলের কুড়িটির মতো কল্যাণী ও যেন বিমর্ষ হয়ে পড়েছে।
কিন্তু উদ্দীপকে দেখা যায় কথকের কল্পনায় যে মেয়েটি নিত্য আসা-যাওয়া তার মাঝে কোন বিরহের লক্ষণ নেই। কথকের মতে বিয়ে না হওয়াতে মেয়েটি যেন রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু তার কল্পনায় মেয়েটি ঢাকাই শাড়ি পড়ে কপালে সিঁদুর মেখে নিত্য আসা-যাওয়া করে। এ আসা-যাওয়ার মাঝে কোন দুঃখ নেই কোন কাতরতাও নেই। তাই বলা যায় উদ্দীপকে কথোক ও অনুপম উভয়ে বিয়ে করতে ব্যর্থ হলেও পরবর্তীতে তাদের কল্পনায় তারা মেয়েটি বা অপরিচিতার যে ছবি এঁকেছে। তার মধ্যে বিরস্ত পার্থক্য বিদ্যমান।
(ঘ) অপরিচিতা গল্পে অনুপমকে আমরা দেখি একজন মাতৃভক্ত এবং পরিবার তন্ত্রের কাছে অসহায় পুতুল মাত্র। বিয়ের ব্যাপারে তার কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা সেখানে উল্লেখ পায়নি। সে সদা সর্বদা অন্যের উপর নির্ভরশীল বিশেষ করে তার মামার উপর। তাই বিয়ের আসরে যখন তার মামা কল্যাণীর শরীর থেকে গহনা খুলে মতো চরম অপমানজনক কাজ করে তখন সে চুপ ছিল। আর তার এরূপ ব্যক্তিত্ব চরিত্রে পরিচয় পেয়ে শম্ভুনাথ তার সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে ভেঙে দেয়।
উদ্দীপকে আরো দেখা যায় শুভ লগ্ন এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও কতক তার বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে আসেন। যার ফলে তাকে অনুপমের মতো বিরহ জ্বালায় পড়তে হয়। অনুপম যেমন কল্পনা করে কল্যাণী তার আসার পথ চেয়ে বসে আছে নিরবে চোখের জল ফেলেছে। উদ্দীপকে কথোপক তেমন কল্পনা করে ঢাকায় শাড়ি পরা মেয়েটি সিঁদুর পরে তার আশেপাশে ঘুরছে। কিন্তু বাস্তবে তারা কেউই তাদের স্বপ্নের নারীর কাছে যেতে পারেনা। আর এর পেছনে দায়ী তাদের ব্যক্তিত্বহীন চরিত্র এবং কাপুরুষতার মানসিকতা।
এই কারণে বলা যায় উদ্দীপকে নায়ক ও অপরিচিতা গল্পের অনুপম উবহে বিরহের জন্য তাদের অক্ষমতার দায়ী।
{getCard} $type={post} $title={Read more}
অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল সৃজনশীল প্রশ্ন ৭
সবেমাত্র ডাক্তারি পাস করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগদান করেছে পরেশ। এর মধ্যেই তার বাবা তাকে জানিয়েছে পাশের গ্রামের সুন্দরী শিক্ষিতা এক মেয়ের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলেছেন। ঘটকের মাধ্যমে পরেশ জানতে পেরেছেন ঘর সাজিয়ে দেওয়ার ছাড়াও বরপক্ষকে মোটা অংকের টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে। সবকিছু জানার পর কোন বিনিময় ছাড়াই পরেশ পরেশ বিয়ের পক্ষে মত দেয় এবং শেষ পর্যন্ত তার কথা সবাই মেনে নেয়।
অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ৭
(ক) বিনু দাদা অনুপমের পিসতুতো ভাই।
(খ) মামা বিবাহ বাড়িতে ঢুকিয়া খুশি হইলেন না কারণ কোন পক্ষের আয়োজন খুব একটা ভালো ছিল না।
অনুপমের মামা বিয়ে বাড়িতে ঢুকে দেখলেন উঠন্তিতে বর যাত্রীর জায়গা খুবই ছোট। এবং কল্যাণীর বাবার আয়োজন সমস্ত ছোট মাধ্যম প্রকৃতির। শম্ভুনাথ বাবুর ব্যবহারও ছিল ঠান্ডা এবং বিনয় অজস্র ছিল না। তাই বিয়ে বাড়িতে ঢুকে মামা খুশি হতে পারলেন না।
(গ) উদ্দীপকে পরেশ অপরিচিতা গল্পে অনুপমের চরিত্রের বিপরীত।
উদ্দীপকে পরেশ একজন ডাক্তার। তার বাবা তাকে জানিয়েছে পাশের গ্রামে এক সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়ের সাথে তার বিয়ে ঠিক করে। ঘটকের মাধ্যমে পরেশ জানতে পারে ঘর সাজিয়ে দেওয়া ছাড়াও তার বাবা কনে পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা চেয়েছেন। কিন্তু এই কথা জানার পর পরে কোনপ্রকার বিনিময় ছাড়া এই বিয়ে করতে চায়। এবং তার এই কথা শেষ পর্যন্ত তার পরিবারের সবাইকে মেনে নিতে হয়। কিন্তু অনুপম অপরিচিতা গল্পের অনুপম চরিত্রটি পরেশ এর বিপরীত প্রতিফলিত। তার সাথে যখন কল্যাণীর বিয়ের কথা ঠিক হয়েছিল তখন পন সম্পর্কে আগেই পাকা কথা দেওয়া হয়েছিল। টাকার অংক স্থির থাকার পাশাপাশি গহনা কত ভারী হবে তাও স্থির হয়েছিল। তবুও অনুপম সে বিষয়ে নিরব ছিল। শেষে যখন বিয়ের আসরে মামা কল্যাণীর গা থেকে খুলে এনে গহনা পরখ করলেন তখন অনুপম কোন প্রতিবাদ করেনি ।
সুতরাং এটা বলা যায় উদ্দীপকে পরে গল্পের অনুপম চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী এক চরিত্র।
(ঘ) অপরিচিতা গল্পের অনুপম যদি পরশের মতো হতো তাহলে এবং কল্যাণী শুভ পরিণয় হতে পারতো।
অপরিচিতা গল্পের অনুপম তার পরিবারের নেয়া সিদ্ধান্ত কাছে মাথা নত করেছিল। ঘৃণ্য সামাজিক প্রথা যৌতুকের বিরুদ্ধে সে কোন প্রতিবাদ করেনি। তার মামা বিয়ের আসরে কন্যার গহনা পরীক্ষা করতে চাইলে সে কোন প্রতিবাদ করেনি। শম্ভুনাথ বাবু তার মতামত জানতে চাইলেও সে নীরব থাকে। এতে শেষ অব্দি কল্যানীর সাথে তার বিবাহ ঘটেনি।
অন্যদিকে উদ্দীপকে পরের যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে এবং কোন বিনিময় ছাড়া এই বিয়ের পক্ষে মত দেয়। শেষ পর্যন্ত সবাই তার মতামত মেনে নেয়। অপরিচিতা গল্পে অনুপম যদি কোন স্থির করার সময় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করত এবং নিজের শক্ত অবস্থান প্রকাশ করত তাহলে তার পরিবার বিয়ের দিন গয়না পরখ করার ঘটনা ঘটাতে পারত না। এতে শম্ভুনাথবাবু অপমানিত হতে না এবং বিয়ে ভেঙ্গে দিতেন না। ফলে অনুপম এবং কল্যাণীর বিয়েতে কোন বাধা থাকত না এবং গল্পের পরিণতি হতো এক অন্যরকম। তাই অপরিচিতা গল্পের উদ্দেশ্য যদি উদ্দীপকে পরেশের মতো হতো তাহলে গল্পের পরিণতি এক ভিন্ন রকম হত যা আমরা আমাদের লেখায় প্রকাশ করেছি।
{getCard} $type={post} $title={Read more}
অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল সৃজনশীল প্রশ্ন ৮
তবু বড় বয়সের মেয়ের সঙ্গে বাবাজি আমার বিয়ে দিলেন তাহার কারণ, মেয়ের বয়স বড় বলিয়াই পানের অংকটাও বড়। শিশির আমার শ্বশুরের একমাত্র মেয়ে। বাবার বিশ্বাস ছিল কন্যার পিতার সমস্ত টাকা ভাবি জামাতার ভবিষ্যতের গর্ভ পূরণ করিয়া তুলিতেছে।
(ক) অনুপমকে মাকাল ফলের সাথে তুলনা করে বিদ্রুপ করেছিল কে?
(খ) তারপর বুঝলাম মাতৃভূমি আছে। বুঝিয়ে লেখ।
(গ) উদ্দীপকে পিতার সঙ্গে অপরিচিতা গল্পের কোন চরিত্রের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
(ঘ) উদ্দীপকটি অপরিচিতা গল্পের বিশেষ একটি দিকই নির্দেশ করে পুরো বিষয়কে নয়। মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ৮
(ক) অনুপমকে মাকাল ফলের সাথে তুলনা করে বিদ্রুপ করেছিলেন পন্ডিত মশাই।
(খ) কল্যাণীর চরিত্রের দেশপ্রেমের বিষয়টি ইঙ্গিত করে অনুপম উক্তি করেছেন।
অনুপমের সাথে কল্যাণীর বিয়ে ভেঙে গেলে সে আর বিয়ে করবে না বলে পণ করে এবং নারী শিক্ষার ব্রত গ্রহণ করে। নারীকে শিক্ষিত করে তোলার মাধ্যমে কল্যাণী দেশের সামাজিক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখে এবং তার এ লক্ষ্যে সে থাকে অনর। তার দেশপ্রেমের এমন পরিচয় উপলব্ধি করে অনুপম উক্তিটি করে।
(গ) উদ্দীপকে পিতার সঙ্গে অপরিচিতা গল্পের মামার চরিত্রের মিল রয়েছে।
গল্পে অনুপমের মামা যৌতুক লোভি চরিত্র। তিনি অনুপমের বিয়ের জন্য এমন পরিবার খুঁজছিলেন যেখানে না চাইলে অনেক টাকা যৌতুক পাওয়া যাবে। তাছাড়া তার ইচ্ছে ছিল এমন পরিবারের অনুপমকে বিয়ে দেবেন যেখানে কন্যা পক্ষকে যখনি বলা হবে তখনই তারা টাকা দিতে রাজি থাকবে। তার এই টাকার লোভে অনুপমের বিয়ের দিন তার বিয়ে ভেঙে দিয়ে যায়।
উদ্দীপকে ছেলের বাবার চরিত্রেও যৌতুক প্রদর্শনী ও অর্থলোভী মনোভাব ফুটে উঠেছে যার কারনে বয়সে বড় মেয়ের সাথে ছেলেকে বিয়ে দিত তিনি দ্বিধাবোধ করেননি। কারণ মেয়ের বয়স বেশি বলে টাকার অংকটাও বেশি। তার বিশ্বাস ছিল মেয়ের বাবার সমস্ত টাকা ভাবি জামাত আর সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তিনি দিয়ে দিবেন। অর্থাৎ বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে উদ্দীপকে বরের বাবা ও গল্পে অনুপমের মামা চরিত্র এক অভিন্ন।
(ঘ) উদ্দীপকে অপরিচিতা গল্পের মামা এর প্রতি দীপ্তি প্রকাশ পেল গল্পে সম্পূর্ণ ভাব ফুটে উঠেনি।
গল্পে যৌতুক প্রথার বহমান চিত্রে প্রতিফলন থাকলেও শম্ভুনাথ সেনের নির্বিকার অথচ বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের কারণে তা নতুন দিকে প্রবাহিত হয় আর এতে বিয়ে সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ কল্যাণীর জীবন সচেতনতাই পাল্টে যায়। যা পরবর্তীতে অনুপম কে প্রভাবিত করে। এসব খুব অল্পই উদ্দীপকে দেখা যায়।
উদ্দীপকে দেখা যায় ছেলের বাবা যৌতুকের লোভে বয়সে বড় মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিতে একটু দ্বিধাবোধ করে না। বরং তিনি এটা ভেবে খুশি যে মেয়ের বাবা অঢেল সম্পদের মাধ্যমে তার ছেলের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত সুন্দর হবে। এক্ষেত্রে মেয়ে বা মেয়ের বাবার কোন রকম প্রতিক্রিয়া উদ্দীপকে থেকে জানা যায়নি। অপরদিকে গল্পে অনুপমের মামানি নিচু মন-মানসিকতা প্রকাশ হবার পাশাপাশি একজন বাবার সাহসী পদক্ষেপের কথা উল্লেখিত হয়েছে। মেয়েও বাবা দুজনেই আত্মসম্মানের খাতিরে সমাজের কথা চিন্তা না করেই বিয়ে ভেঙে দেয়। এক্ষেত্রে দেখা যায় অনুপম কে নিশ্চুপ থাকা এবং ব্যক্তিত্বহীনতা। পরবর্তীতে কল্যাণী দেশের সেবায় মনোযোগী হয়। কিন্তু উদ্দীপকে গল্পে এ সকল দিকে কোনোটিই উঠে আসেনি। তাই বলা যায় উদ্দীপকটি অপরিচিত গল্পের বিশেষ একটি দিক নির্দেশ করে কিন্তু পুরো বিষয়টিকে নয়।